ষোড়শ সংশোধনী মামলার আপিল শুনানিতে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী বঙ্গবন্ধু নিজেই চাননি বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকুক
এস এম নূর মোহাম্মদ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, সংবিধান প্রণয়ন হয়েছে। সেই সংবিধান প্রণেতা, আমাদের জাতির পিতার নেতৃত্বেই জাতীয় সংসদ থেকে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা নিয়ে আসার একটা আইন পাস হয়েছিল ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। আমরা মনে করি, তারই অনুসারী হিসেবে সেটা সমর্থন করা দরকার। যদি কেউ এটার বিরোধিতা করে তাহলে সেটা সঠিক হবে না। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে গতকাল বুধবার এসব যুক্তি তুলে ধরেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
বিরতির পরে মনজিল মোরসেদ তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ৭২ এর সংবিধানের ব্যাপারে যে সাবমিশন রাখা হয়েছে সেটা ভুল। একটি সদ্য স্বাধীন দেশে যে সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল, সে সময় কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না বলে এ বারের দুজন (ওই সময়ের মন্ত্রিসভার দুজন সদস্য) সদস্য বলেছেন। তখন করা সংবিধানে বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি সংসদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিজেই অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে ফিরিয়ে নেন।
এ পর্যায়ে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আপনি কি ১১৬ এর কথা বলছেন? মনজিল বলেন, না। আমি ৯৬ অনুচ্ছেদের কথা বলছি। আমরা যে সংবিধানের কথা বলি, ১৯৭২ সালের সংবিধান। এটা বঙ্গবন্ধুর সংবিধান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে করা সংবিধান তিনি নিজেই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন করেছেন। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত নয় সেটা বঙ্গবন্ধুরই সিদ্ধান্ত। যার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই জাতির পিতাই অভিজ্ঞতার আলোকে সংবিধান সংশোধন করেছেন। এরপর বিচারপতি অপসারণ পদ্ধতিটাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী রায়ের আলোকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, আদি (১৯৭২ সালের সংবিধান) সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না। অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্য ঠিক না। বঙ্গবন্ধু নিজেই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এটা করেছেন। তবে শুধুমাত্র মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন করা যাবে না।
মনজিল মোরসেদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিচারক অপসারণের বিষয়টি তাড়াহুড়া করার কারণেই বাদ পড়েছে, তার এই বক্তব্যও ঠিক না। ওই পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হওয়ার আগে পাঁচজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ছাড়াও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিভিন্ন অংশীদারদের (স্টেকহোল্ডার) মতামত নেওয়া হয়। ফলে তাড়াহুড়ার কথা যেটা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, সেটি সঠিক নয় এবং খুবই দুঃখজনক। অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন বক্তব্যে জাতীয় সংসদকে খাটো করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এমন বক্তব্য দিতে পারেন না। ওই সংশোধনীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। তখনও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিলের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। এই ছিল পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট। এ থেকে প্রমাণ হয়, তারা জেনেশুনে, বুঝেশুনেই পঞ্চদশ সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান যুক্ত করেননি। পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ে আপিল বিভাগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থাকে বৈধতা দিয়েছে এবং পরবর্তীতে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) রায়ে তা বহাল রাখা হয়।
ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মনজিল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পরপরই দেশে বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। আদালত আবমাননার আইন করা হলো। অনেক সচিবকে আদালতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে আদালত অবমাননার আইন সংশোধন করে বলা হলো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা যাবে না। এর অর্থ হলো, এর ফলে তাদের মধ্যে আদালতের রায় না মানার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এরপর আমরা আদালত অবমাননার আইনটির বৈধতা চ্যলেঞ্জ করলে আদালত ওই আইনটি বাতিল করে দেন। এরপর দুদক আইন সংশোধন করা হয়। যেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া অভিযোগ করা যাবে না। চ্যালেঞ্জ করা হলে আদালত এই ধারাটিও বাতিল করে দেয়। এরপর নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ঘটে। হাইকোর্ট আদেশ দিল এরপর পরপরই সংসদে আলোচনা ওঠে, বিচারপতিদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করা হলো। সংসদে কেউ কেউ বললেন, আমরাই বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়েছি তাদের অপসারণের বিষয়টি আমরাই সংসদে নিয়ে আসবো। সচিবদের ডাকা, সাংসদদের জামিন না দেওয়া- এসব ধারণা থেকেই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনার হুমকি দিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে ষোড়শ সংশোধনী আনা হলো। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়া হলো।
এরপর অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, পাকিস্তান, বুলগেরিয়াসহ যেসব দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রয়েছে সেসব দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন মনজিল মোরসেদ। ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে মনজিল মোরসেদ বলেন, এই ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে সংসদে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটছে না। ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। জাতীয় সংসদে এই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন না। ভয় একটাই, দলের বিরুদ্ধে মত গেলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। দলের ভেতর গণতন্ত্র অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। আগে তৃণমূল থেকে নেতা পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রে আসতো। এখন অনেকে সরাসরি আসে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, আগে সংসদ সদস্যদের বেশিরভাগ ছিল আইনজীবী। এখন একেবারে শূন্য। মনজিল মোরসেদ বলেন, এখনতো ব্যবসায়ী বেশি। এরা ব্যবসার বাইরে চিন্তা করবে না। শুনানির শেষ পর্যায়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশ। এটাতে হাত দেওয়া যাবে না। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এতে আঘাত করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো আইন করা হলে সেটা বাতিল করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। অনেকে বলেন, সংসদ আইন পাস করে। সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেসব আইন বাদ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে কেন বাদ হয়। সংসদের পাওয়ারটা জানতে হবে। কেউ কেবল একটি অনুচ্ছেদ জানলেই সংবিধান বিশেষজ্ঞ হয় না। তাকে জানতে হবে। ১৪২টা দেখতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা আছে সাংঘর্ষিক কোনো আইন হলে সেটা বাতিল করার।
এর আগে ষষ্ঠদিনের শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থানের জন্য দাঁড়ান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসময় প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা আপনাকে বেশি প্রশ্ন করবো না। কারণ যাই বলি তা মিডিয়াতে চলে যায়। বিচারক অপসারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে যদি ব্যাখ্যা করেন, সেটা হবে কষ্টদায়ক। আজ ইংল্যান্ডের কি অবস্থা? আপনি লিখিত যুক্তিতর্কে অনেক কিছুই না জেনে লিখেছেন। যে আপনাকে অ্যাডভাইস করেছে সে জানে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাকে কে অ্যাডভাইস করবে?
প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে আপনার টিম আছে। আমি আপনাকে অবমূল্যায়ন করছি না। আপনার ১৫৫ জন ল’ অফিসার রয়েছে। তাদের অনেকেই বিদেশে লেখাপড়া করেছেন। এই কারণে অ্যাডভাইসের কথা বলছি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বোঝার চেষ্টা করেন। আমরা ঘরে (বাহাত্তরের সংবিধান) ফিরতে চাই। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি ইংল্যান্ডের অনেক সাবমিশন দিয়েছেন। তা কি না জেনেই দিয়েছেন? পৃথিবীর একমাত্র সভ্য দেশ ইংল্যান্ড। যে দেশে অলিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন, ক্ষমতা হস্তান্তর হয়ে থাকে। চুল পরিমাণ এদিক-সেদিক হয় না। ব্রেক্সিটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কি চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা!
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ইংল্যান্ডকে সভ্য দেশ বলতে পারেন না। কারণ তাদের ইতিহাসই তো লুণ্ঠনের। ইংল্যান্ড বিদেশিদের লুণ্ঠন করেছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি সভ্য দেশ বলতে বুঝিয়েছি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে দৃষ্টিকোণ থেকে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইংল্যান্ডে রুল অব ল’ বিকাশ ঘটেছে সেটা বলতে পারেন। কিন্তু সভ্য দেশ বলতে পারেন না।
প্রধান বিচািরপতি বলেন, আদি সংবিধানে ফিরে যাবেন? আমেরিকার সংবিধানে তো আছে ‘উই দ্য পিপল’। সেখানে আগে দাসপ্রথা চালু ছিল। এটা মাথায় রেখেই পরবর্তীতে পনের শতকের দিকে পরিবর্তন হয়েছে। এখন ইথিওপিয়া, মরক্কোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোক আমেরিকায় ভর করছে। এখন কি তারা আদি সংবিধানে ফিরে যাবে? আপনাকে সূক্ষ্মভাবে প্রশ্ন করছি এর উত্তর দিবেন। সমস্ত পা-িত্য আমাদের, আপনাদের সবার। তবে বাহাত্তরের সংবিধানে হাত দিবেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে তো অদক্ষ ও কতিপয় বিচারকের অসততার বিষয়টিতো দেখতে হবে। এ পর্যায়ে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, তাহলে কি বিচার বিভাগের বিকাশ ঘটবে না? জুডিশিয়াল রিভিউ থাকবে না? তাহলে জুডিশিয়াল রিভিউ উঠিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর প্রশ্ন যখন আসবে তখন আমরা সংবিধানের এ টু জেড দেখবো। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা ঠিক না। আপনারা যোগ করতে পারেন কেবল। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন, আমি এত কথা বলি কেন? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনমন্ত্রী কী বলেছেন সে বিষয়ে আমি জানি না।
বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, আপনি যেভাবে বলছেন, সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড পাওয়া গেছে। রায়ে তো সেভাবে নাই। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কালকে একটি শব্দের ব্যবহারের কারণে গণমাধ্যম আমাকে খলনায়কে পরিণত করেছে। আপনার নিজেরই একটি রায় আছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের রায়ের ফাইন্ডিংস কি আছে তা দেখতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে যাতে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেটার কারণেই বলা আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অবৈধ। যদি সেটা বাতিল করা হতো তবে ওইসময়ের বিচারও বাতিল হতো। ফলে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হতো।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তৎকালীন টেকনোক্রেট আইনমন্ত্রী, যিনি এই আদালতেরই একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের এক ধরনের সুবিধা দিতেই জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বাদ দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন। প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যে আপত্তি তুলে বলেন, তিনি টেকনোক্রেট মন্ত্রী ছিলেন। বারের নির্বাচিত দুবারের সভাপতি। তিনি অত্যন্ত সজ্জন ও ভদ্রলোক। তার মন্ত্রিত্বকালীন সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল। সুপ্রিম কোর্টকে আন্ডারমাইন করবেন না। টেকনোক্রেট মন্ত্রীদের নিয়ে এত কথা বলছেন। তাহলে কেন এ প্রথা রেখেছেন? কেন বাতিল করেননি? একটি শব্দ ব্যবহারের পূর্বে বুঝে শুনে করবেন। ইট মারলে পাটকেল পরবে, এটা মনে রাখবেন। যার কথা বলেছেন, তার যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনে অবদান রয়েছে। তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরাও পিছনে ছিলাম। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি রাজনৈতিক মেনিফেস্টোতে ছিল। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি না থাকলে এটা হতো না। প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে আবার প্রধানমন্ত্রীকে টানছেন কেন? আপনি যদি গণতন্ত্র, আইনের শাসনের কথা বলেন, তাহলে ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের সভ্য দেশগুলোর দিকে তাকান। ভারতের বিচারক নিয়োগের কলেজিয়াম প্রথা বাতিল করে সরকার নতুন আইন করেছিল। সে আইন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সংসদে টু শব্দ করেনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। সে দেশের সংসদ ও রাজনীতিবিদরা মাথা নিচু করে তা মেনে নিয়েছে। যে পাকিস্তানে সুবিধাভোগী সরকার থেকেছে বেশিরভাগ সময়। সেই দেশেরই সুপ্রিম কোর্টের কি রকম ভূমিকা তা দেখুন। কিন্তু আমাদের দেশে কি হয় তা দেখুন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টে কি হচ্ছে এ নিয়ে একটা গণশুনানি নেন। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আগে কি ছিল জানি না। কিন্তু আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ৯০ ভাগের উপরে। আমি কয়েকদিন আগে বাঁশখালী চৌকি আদালতে গিয়েছিলাম। সেখানে যে সংখ্যক বিচারপ্রার্থী ভিড় করেছে তা অবাক করার মতো। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ শতগুণ বেস্ট। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি আপনার সব কথার সাথে একমত পোষণ করতে পারছি না।
এ পর্যায়ে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে প্রধান বিচারপতির কাছে দিতে পারতেন। এখন পর্যন্ত কি কোনো অভিযোগ দিয়েছেন? প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি একমত পোষণ করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এ আদালতে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনার সঙ্গে একমত। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি দক্ষ, যোগ্য বিচারককে এখানে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলাম। যে কারণে গত দেড় বছরে কোনো বিচারক নিয়োগ হয়নি। আপনারা যা চাচ্ছেন সেটি হলে তো এরকম হবেই। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা মূল সংবিধানে ফিরে যেতে চাই। এটি (সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান) সাংবিধানিক ইতিহাসে লজ্জা। আমেরিকা, ভারতে মার্শাল ল’ হয়নি। আমাদের এখানে হয়েছে। মার্শাল ল’ এর মাধ্যমে যতখানি হয়েছে ততখানি বাদ দিতে চাই। বিগত সময়ে পারিনি। ধর্মীয় বিষয় কিছু ছিল। রাস্তাঘাটে মারপিট লেগে যাবে। আপানারাতো অংশীজন। আপনাদের মতামত রাখার সুযোগ আছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, একটিতে আপস করতে পারলে অন্যটিতে নয় কেন? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখনো আইন হয়নি। আইনে সব বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, স্টেকহোল্ডারদের মতামত না নিয়েই তো আপনারা আইন করে ফেলেছেন। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখনো আইন পাস হয়নি। আপনারা আইন করার কথা বলতে পারেন।