শামসুল ইসলাম
ইসলামের ইতিহাসে হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফত এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় অধ্যায়। এ সময়ে সভ্যতার অভিযান যে-ভাবে ও যে-গতিতে পুরাতন জরাজীর্ণ ঘুণেধরা প”থিবীকে ওলটপালট করে দিয়েছিল তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। যে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল রসূলুল্লাহ (সা)-র আমল থেকে তা হজরত আবূ বকর (রা.)-এর খিলাফতের পর হজরত ওমর (রা.)-এর স্কন্ধেই ন্যস্ত হয়। দেশ বিজয়ের সাথে সাথে যে সব নতুন নতুন সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল হজরত ওমর (রা.)-কে সেই সব সমস্যার মুকাবিলা করতে হয়। তিনি ইসলামের মারফত এগুলোর সমাধান খুঁজেছিলেন; আর তার প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন সমাজ কল্যাণে। সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে ইসলামী সমাজ দর্শনের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা না হলেও সেই মধ্যযুগেও যে এক সুষ্ঠ নৈতিক ও সামাজিক বাস্তব সমাজ-ব্যব¯’ার গোড়াপত্তন হয়েছিল তা ইতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। খোলাফায়ে রাশেদা বা প্রথম চার খলিফার সম্বন্ধেও একথা বলা চলে তবে সংগঠনের দিক দিয়ে হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতের ভিতরে পাই এক চমকপ্রদ পৌর ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ইতিহাস। ঐতিহাসিক ওয়েল (ডবরষ) হজরত ওমর (রা.)-কে তাই ‘ঞযব এঁরফরহম ঝঢ়রৎরঃ ড়ভ ওংষধস’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সাম্যের সমাজ : হজরতর ওমরের (রা.) শাসনকার্য পরিচালনার জন্যে দুটি মন্ত্রণা সভা ছিল। সাধারণ সভায় সব সমস্যার সাধারণ আলোচনা করা হত। এখানে জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারত। প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ, কর্মচ্যুতি ও অন্যান্য বিশেষ সমস্যার ভার এক একটি কমিটির ওপর ছেড়ে দেয়া হত। মফস্বল থেকে মাঝে মাঝে প্রতিনিধিদল এসে দেশের অব¯’া সম্বন্ধে খলিফাকে খবর জানিয়ে যেতেন ও তাঁদের দাবি-দাওয়া পেশ করতেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তার নিয়োগের সময় এদেশের অধিবাসীদের মতামত নেয়া হত। কুফা, বসরা ও সিরিয়ার অধিবাসীরা এই মতামত ব্যক্ত করে শাসনকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে শরীক হয়েছিলেন। মাঝে মাঝে শাসন বিষয়ে তদন্ত হত। এই ধরনের এক তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কুফার শাসনকর্তা সাদকে পদচ্যুত করা হয়েছিল। ব্যবসায়ের নিয়ম না জানায় সে-সময় ব্যবসা করা যেতো না। সাধারণ কর্মচারীর বেতন ও খলিফার বেতনে কোনও তারতম্য ছিল না। পরিষদের অনুমতি ব্যতীত এতটুকু জিনিসও খলিফা গ্রহণ করতেন না। নিজের শরীরের স্থানে মধু লাগাবার দরকার হলে পরিষদের অনুমতি নিয়ে তারপর অল্প একটুখানি মধু খলিফা গ্রহণ করেন। খলিফা হজরত ওমর (রা.) সালমান নামে এক বিশিষ্ট সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেন যে, তিনি খলিফা না বাদশা? সালমান বললেনÑ যদি জোর জুলুম করে জনসাধারণের কাছ থেকে আপনি টাকা-পয়সা আদায় করেন আর বায়তুল মালের টাকা আত্মসাৎ করেন তবে আপনি বাদশা, নতুবা আপনি খলিফা। বিচার ব্যবস্তা: বিচারালয়ে শাসক-শাসিতের একই মর্যাদা ছিলো । উবাই ইবনে কাবের সংগে মোকদ্দমায় খলিফা ওমর (রা.) কাজি জায়েদ বিন ইবনে সাবিতের আদালতে হাজির হয়েছিলেন।