মানুষের প্রশংসা করা : সহিষ্ণু সমাজের চাবিকাঠি
া তারিকুল ইসলাম
ভালবাসা ও আন্তরিকতা সত্বেও আপনার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রাম ছেড়ে কখনও প্রবাস জীবনযাপন করেছেন কি? প্রবাস জীবনের বছরগুলো কিভাবে কাটিয়েছেন? তাদের সাথে অথবা আপনার প্রিয়জনদের সাথে কখনও সেনানিবাসে জীবনযাপন করেছেন কি? বিবেক ও আবেগের সমন্বয়ে একই বিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আপনি যাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, আপনার ঐসব সঙ্গীদের সাথে জুলুম-নির্যতন ও অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করেছেন কি? উপরিউক্ত সকল অব¯’ানে যে ব্যক্তি জীবনযাপন করে, তার ব্যাপরে আপনার অভিমত কি? মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা উপর্যুক্ত প্রশ্নগুলিই হলো কারও সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখার জন্যে অন্যতম শর্ত। এবং এগুলি যদি আপনি সানুপুড়খ চিন্তা করতে পারেন তাহলেই আপনি মানুষের প্রশংসা করতে পারবেন। এমনকি আপনার মুসলিম ভাইকে কারও আপত্তি ও অপমানের হাত থেকেও বাঁচাতে পারবেন। ল্য করুন সাহাবিদের মধ্যে পাস্পরিক ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন কেমন ছিল? আপনার স্ম”তির দ”শ্যপট থেকে অদ”শ্য হবে না এই বিষয় যে, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁদের সাথে তাঁদের সেনাপতি, মুরববী ও শিক হিসেবে জীবনযাপন করেছেন। আপনার স্ম”তিপটে যেন ভেসে উঠে, আসমান ও জমিনের প্রতিপালকের প থেকে আল-কুরআন অবতীর্ণ হ”েছ এই দলের নেতা রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি। আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা মানুষ যেমন আল্লাহ প্রশংসা ও গুণগান গায়, তেমনি কখনো কখনো আল্লাহ বান্দার প্রশংসা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু; অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তেমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে…। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত১০৩) উদার মনের হতে হলে এ আয়াতের তাৎপর্য সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণ করুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে এই স্যা প্রদান করা হয়েছে যে, ‘তিনি তাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেছেন।’ কিš’ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই শত্রুতাকে দূর করে দিলেন এবং তার পরিবর্তে তাদেরকে ভালবাসা ও ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। এবং তাদের ভালোবাসাকে আল্লাহ পছন্দ করে তার প্রশস্তি গেয়েচন স্বয়ং কোরআনে। অন্য আয়াতে তিনি বলেছেন, এই সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরগণের জন্য যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সš’ষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যাশ্রয়ী। আর তাদের জন্যও, মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এই নগরীতে বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে আকাড়খা পোষণ করে না, আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। [সূরা ফুরকান, আয়াত ৮-৯] সাহাবিদের প্রশংসার রীতি আলী আল-আরবালী ইমাম আলী ইব্ন হাসান (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ইরাক থেকে ইমামের নিকট এক দল লোক আসল, অতঃপর তারা আবু বকর, ওমর ও ওসমান (রা)-এর ব্যাপারে নানা কথা বলল; তারপর তাদের কথা শেষ হলে ইমাম তাদেরকে ল্য করে বললেন, তেমরা কি আমাকে সংবাদ দেবে? তোমরাই কি প্রথম সারির মুহাজির, (যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সš’ষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যাশ্রয়ী)? তারা বলল: না, অতঃপর তোমরা কি তারাই, (মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এই নগরীতে বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে আকাড়খা পোষণ করে না, আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও)? তারা বলল,না, তিনি বললেন: জেনে রাখ, তোমরা যদি এই দুই দলের কেউ না হয়ে থাক, তবে আমি স্যা দি”িছ যে, তোমরা তাদেরও কেউ নও, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: (তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাগণকে মা কর এবং মু‘মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রেখো না।) তেমরা আমার কাছ থেকে বের হও, আল্লাহই তোমাদের ব্যাপারে ফয়সালা করবেন। [কাশফুল গিম্মাহ, ২/ ৭৮]
প্রশংসা মুসলিম ভাইয়ের সম্মান রার হাতিয়ার একজন মুসলমানকে তার ভাইয়ের সম্মান রা করতে হয়, যখন কেউ তার আড়ালে তার সম্পর্কে কোনো কিছু বলে থাকে। ইসলাম শান্তি, ভালোবাসা আর সহানুভূতির ধর্ম। মিথ্যা কথা বলা, অন্যায় সন্দেহ, পরনিন্দা, অপবাদ দেয়া এবং পরচর্চামূলক অলস আড্ডা ইসলামের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রকৃতপ,ে এগুলোকে বড় ধরনের গুনাহের কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। এর কারণ হলো, এই পাপ কাজগুলো মুসলিম সমাজে বা উম্মাহর মাঝে শত্রুতা-বিবাদের বীজ বপন করে একে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এসব অপকর্ম একই পরিবারের মধ্যে এবং প্রতিবেশী, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে শত্রুতার জন্ম দেয়। আল্লাহ বলেছেন, তারা অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেরা পরস্পরের প্রতি দয়ালু [সূরায়ে আল ফাতহ, আয়াত নম্বর ২৯] যে তার অনুপ¯ি’ত ভাইয়ের সম্মান রা করে, আল্লাহ তাকে বিরাট পুরস্কারে ভূষিত এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে রা করার অঙ্গীকার করেছেন। হযরত আবু আদ-দারদা (রা) বর্ণনা করেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে অন্যকে পরনিন্দা থেকে বিরত রাখে, সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে রা করল।
পরনিন্দা বা পরচর্চা না করা একজন ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলছেন, আর যখন তারা শোনে ‘আল লাগওয়া’ (নোংরা, মিথ্যা, মন্দ ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা), তারা এটা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের কাজ আমাদের সাথে, আর তোমাদের কাজ তোমাদের সাথে। তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না। [সূরা আল কাসাস, আয়াত ৫৫] প্রশংসা বিপরীত হলো পরনিন্দা যখন কোনো ব্যক্তি অন্য কারো সম্পর্কে তার অনুপ¯ি’তিতে কিছু বলে, তখন একজন মুসলমানকে তার সে ভাইয়ের মর্যাদা রাখতে হয়। ইসলাম আমাদের বলে, মুসলমানরা না অন্যের ওপর অবিচার করবে, আর না তাদের নিজেদের প্রতি কোনো অবিচার সহ্য করবে। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা আর একের জন্য অন্যের উদ্বেগের দিক দিয়ে দুনিয়ার সব মুসলমান একটি দেহের মতো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন দেহের কোনো অংশ ব্যথা পায়, পুরো শরীরই ব্যথা অনুভব করে’ [সহিহ মুসলিম] ঈমানদাররা জানেন, শয়তান তাদের ধ্বংস করে দিতে চায়। কারণ, তারা পরনিন্দা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। যদি কোনো ঈমানদার (পরনিন্দা চলাকালে) কথাবার্তার বিষয় বদলাতে সম না হন, তার মনে মনে হলেও এই বদভ্যাসকে ঘ”ণা করা উচিত। তার উচিত ওই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়া। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন, ‘এবং যদি শয়তান তোমাদের ভুলিয়ে দেয়, তাহলে মনে পড়ার পর আর তাদের সাহচর্যে বসে থেকো না, যারা জালিম (অন্যায়কারী)। [সূরা আনআম, আয়াত ৬৮]