মায়ের সঙ্গে সদাচরণ জান্নাতের পথকে সুগম করে
া মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
আম্মি, আম্মু,মাম্মি? না এসব না। ‘মা’ ‘মা’ আহ! ‘মা’ শব্দটি একদম ছোট একটি শব্দ। দুঠোট মেলালেই উ”চারণ হয়ে যায়। ধ্বনিতে বেজে উঠে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসামাখা মায়াবী ‘মা’ সুরটি। কিš’ এর অনুভূতি, স্বাদ, ফিলটা অনেক গভীরের। যা কেবল একটা সন্তান ছাড়া অন্য কেউ উপলব্ধি করা দুষ্কর। ‘মা’ শব্দটি উ”চারণের সঙ্গে সঙ্গেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অনেক ভাবনা। অনেক ভালোবাসা। অনেক আবেগ। অনেক ভালোলাগা। তাইতো বলি, শুধু মমতাময়ী বা কোমলমতী দিয়ে বিশেষ এ নারীসত্তাকে বর্ণনা করা কারো পইে কখনো সম্ভব না। তুলির এক আঁচড়ে যেমন পরিপূর্ণ একটা ছবি আকা যায় না। ঠিক তেমনিভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে মানুষটি আমাদের দেখিয়েছেন প”থিবীর আলো। এনে দিয়েছেন এক নতুন অ¯ি’ত্ব। এক নতুন পপ”থিবী। এক নতুন জীবন। এক নতুন অধ্যায়। এক কথায় কী আর তার মাহাত্ম প্রকাশ করা যায়! তা সম্ভবই না। কখনো না। এক্কেবারে না। আমার কাছে আমার মা হ”েছন একটা রঙধনু। যার হরেক রঙ। একটা আলো। যার হরেক বাতি। একটা শব্দ যার হরেক আওয়াজ। কখনও তিনি মমতাময়ী মা, কখনও পথনির্দেশক, কখনো শাসক কখনো পালক। কখনো রাগি কখনো হাসি। কখনো বিপদের আশ্রয় আর কখনওবা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। একই সঙ্গে তার নানান রূপ ও রঙ। আর সেই রঙের আলোকছটা একেকজনের কাছে একেক রকম।
জন্মের পর থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত মায়ের প্রতি সন্তানদের অনুভূতি থাকে একইরকম। ১০ই মে, মা দিবসের এ বিশেষ দিনে মাকে নিয়ে একান্ত অনুভূতি অনকেই লিখছে। কিš’ এ ভালোবাসা আমি কখনো একদিনের জন্য সীমাবদ্ধ করবো না। আর সেসব হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি আমার বিশেষ আয়োজনে মিশিয়েও দেবো না। মাকে আমি ‘মা’ বলেই ডাকি। শুধু আমি না আমার বাকি সব ভাইন বোনও। বাস্তবতা হলো কি ‘মা’ ডাকটির মধ্যে যে স্বর্গীয় সুখ রয়েছে, অন্য কোনো ডাকে এতটা মধুরতা নেই। নেই কোনও স্বাদও। কারণ এ মহিয়সী নারীর জন্যই তো আমাদের আজ প”থিবীতে আসা। তাইতো বলি, আমার দেখা নারীদের মধ্যে আমার ‘মা’ সবচাইতে সুন্দরী আমার কাছে একজন সফল মানুষ। মাঝে মাঝে মায়ের দিকে অপলক দ”ষ্টিতে চেয়ে থাকি অবিরাম। সহ্য করতে না পেরে তো কখনও কখনও বলেই ফেলি- মা, মাগো তুমি এত সুন্দর কেন! মা আমার তখন মুচকি হেসে বলে, বোকা ছেলে একটা! বরাবরই ভাবি আর বাস্তবেও ফিল করি, আমার মা-ই এ প”থিবীর এক সেরা মা। এতো ব”দ্ধ হবার কাছাকাছি বয়সেও মাশাআল্লাহ সেই সকাল থেকে শুরু করে রাত অব্দি কাজ করেই চলেছেন। শুধু টাইমমত আমাদের মুখে আহার তুলে দেবার জহ্য। মনে পড়ে মা আমাকে মাদরাসায় আসা-যাওয়ার, আনা-নেওয়ার, টিফিন তৈরি, ব্যাগ গোছানো, পড়াশোনা তো রয়েছেই। সবকিছু মা-ই করেন। আর করতে স্বা”ছন্দ্যবোধও করেন।
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করতে ও বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)।
হাদিস শরীফে এসেছে, একবার জনৈক সাহাবি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে জিহাদে যাওয়ার তীব্র আকাড়ক্ষা প্রকাশ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাবা-মা কেউ কি জীবিত আছে? সাহাবি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বাড়িতে গিয়ে তাদের সেবা কর (বুখারি শরীফ, হাদিস নং-২৮৪২)।
বাবা-মা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের প্রতি দায়-দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়, তাদের সেবা-শুশ্রূষা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বার্ধক্যের কারণে বাবা-মায়ের মেজাজ কিছুটা খিটখিটে ধরনের হয়ে যেতে পারে, সামান্য বিষয় নিয়ে তুলকালাম কা- ঘটাতে পারেন। মুহূর্তেই যেকোনো বিষয়ে রেগে যেতে পারেন। নিজের কাছে তা অপছন্দ মনে হতে পারে। তাই তাদের এ অস্বাভাবিক আচরণকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। কোরআনে বলা হয়েছে, তাদের একজন বা উভয়েই জীবদ্দশায বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বল না।
তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বল (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)। সন্তানের জন্য বাবা-মা উভয়েই কষ্ট করেন। প্রচুর। অনেক প্রচুর। তথাপি বাবার তুলনায় মায়ের হক অনেক বেশি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ব্যক্তি আমার সর্বাধিক সদাচরণ পাওয়ার অধিকারী? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল তারপর কে তিনি বললেন, তোমার বাবা (মুসলিম)। মাওলার কাছে আকুতি, তিনি যেনো আমাদেরকে বেশি বেশি পিতা-মাতার সেবা করে জান্নাত অর্জন করার তাওফিক দান করে।