ইভটিজিং ও ব্যভিচার কে না বলুন
া আব্দুল্লাহ আল মামুন
ইভটিজিং শব্দটি বর্তমান সময়ে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ। ইদানিং কালে তা বেশি বেশি উ”চারিত হ”েছ। ইভ্ অর্থ আদি মাতা হাওয়া এবং টিজিং অর্থ উত্যক্ত করা। অতএব, ইভটিজিং অর্থ নারীদের উত্যক্ত করা। ইভটিজিং একটি জঘন্যতম ও নিন্দনীয় সামাজিক ব্যাধি। সমাজের বখাটে, চরিত্রহীন, লম্পট, উশ”ড়খল এবং মাদকাসক্ত ছেলেরাই এর আসল হোতা। ইভটিজার-রা মেয়েদের গমনাগমনের পথে উৎপেতে অব¯’ান করে নানাভাবে উত্যক্ত করে। ফলে মেয়েদের চলাফেরা, পড়ালেখা ও কাজকর্ম বিঘিœত হয়। বিঘিœত হয় সমাজের শান্তি। শুরু হয় কলহ, বিবাদ, বিসম্বাদ। সমাজে দেখা দেয় নানাবিধ অন্যায় অপকর্মের।মানবতার ধর্ম ইসলাম ইভটিজিংকে সমূলে উৎখাতের ব্যব¯’া করে রেখেছে। যেসব কারণে সাধারণত ইভটিজিং এর মত অপরাধ সংঘটিত হয়, ইসলাম তা অংকুরেই বিনাশ করে দিয়েছে। সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়া এবং তাদের চরিত্র গঠন ও নৈতিক মূল্যবোধ সহ তাকওয়াবান করে গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, শিষ্টাচার শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তাদেরকে শাসন থেকে বিরত থাকবে না(আহমদ)।
নারীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় এজন্য গায়রে মাহরাম নারীদের প্রতি থাকাতে নিষেধ করেছে। হজরত কাসিম বিন আব্দুর রাহমান ((রহ.)) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)হতে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, চোখের দ”ষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলির মধ্যে একটি তীর। যে ব্যক্তি আমার ভয়ে দ”ষ্টি নিক্ষেপ বর্জন করবে আল্লাহ পাক উহার পরিবর্তে তাকে এমন ঈমান দান করবেন, যার স্বাদ সে অন্তরে অনুভব করবে (ত¦াবারানী)। এমনকি পবিত্র কোরআনেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে এভাবে, আল্লাহ বলেন, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দ”ষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দ”ষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে (সূরা আন নূর ঃ ৩০, ৩১)। ইভটিজিং এর সিঁিড় বেয়ে অনেকে বিপথগামী ধর্ষণ বা ব্যভিচারে লিপ্ত অথবা ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে। অথচ ইসলাম ধর্ম ব্যভিচার এবং এতদসংশ্লিষ্ট কাজ হতে দূরে থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছে। এমনকি, ব্যভিচারের যাতে কোন সুযোগ তৈরী না হয় সেটাও ইসলাম সতর্ক রয়েছে। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কেন পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে মাহরাম ব্যতীত একান্তে মিলিত না হয়। এর মাধ্যমে ইসলাম মূলত ব্যভিচারের পথকে অবরূদ্ধ করতে চায়। এছাড়া আল্লাহর বাণী, আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ (সুরা আল ইসরা ঃ ৩২)। আর ইসলাম ধর্ম অশ্লীল অশোভনীয় কাজকে কখনো প্রশ্রয় প্রদান করে না। চাই সে যতবড় বিত্তশালী বা বিত্তবান হোক না কেন। সবার জন্য সমানভাবে নির্দেশনা প্রদান করে রেখেছে। এরপরও যদি কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে পরিপূর্ণ মুমিন থাকে না। কোন বান্দা পূর্ণ ঈমানদার থাকা অব¯’ায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না। ঈমান একজন ব্যক্তিকে সকল খারাপ এবং গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখে। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.)হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ব্যভিচারী ঈমান থাকা অব¯’ায় ব্যভিচার করতে পারে না (বোখারী ও মুসলীম)। ইমাম বোখারী (রহ.) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি পূর্ণ ঈমানদার থাকবে না এবং ঈমানের আলো থাকবে না। অন্য হাদীসে এসেছে, ব্যভিচারে লিপ্ত হলে ঈমান বের হয়ে যায়। তার তাকওয়া সরে যায় অন্তর থেকে। তখন লিপ্ত হয় ব্যভিচারে। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন কোন বান্দা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ঈমান বের হয়ে যায় এবং এটা ছায়ার মতো তার মাথার উপর অব¯’ান করে। অতঃপর সে যখন এ অপকর্ম হতে বিরত হয়, তখন তার দিকে ঈমান ফিরে আসে’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)।
এতে স্পষ্ঠ হয়ে উঠে যে, একজন পরিপূর্ণ মুমিন ব্যক্তি ইভটিজিং বা তৎসংশ্লিষ্ট অগ্রবর্তী কাজ ব্যভিচারে লিপÍ হতে পারে না। আর এ কাজসমূহ আদর্শ সমাজ গঠনের পরিপš’ী। আমাদের সমাজের এহেন নিকৃষ্ট কার্যাবলীকে দূর করতে না পারলে সমাজের ধনী-গরীব, ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা কেউই সুন্দর ও ভালোভাবে বসবাস করতে পারবে না। আসুন আমরা ইভটিজিং ও ব্যভিচারের পথকে বন্ধ করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।