ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
বিপ্লব বিশ্বাস : গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরানো ‘গ্রিক দেবী’র ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে মাজার গেটের সামনে যাওয়ার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রঙিন পানি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে ১৭ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে উদীচী, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ছাত্র ঐক্য ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের মাজার গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। ব্যারিকেড ভেঙে তারা সামনে এগুতে চাইলে পুলিশ জল কামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় কয়েকজন আহত হন। পুলিশি বাধার মুখে হাইকোর্টের মাজার গেট পার হতে না পেরে সেখানেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন ছাত্ররা। এসময় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ব্যারিকেড ভাঙলে পুলিশ তাকেসহ দুজনকে আটক করে। কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে লিটন নন্দীকে ও আল আমিন হোসেন জয়, উদীচীর আরিফুরসহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন,‘হাইকোর্ট একটি সংরক্ষিত এলাকা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ। তারা হাইকোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইছিল। আমরা তাদের সকাল থেকে ঠেকানোর করার চেষ্টা করছি। দফায় দফায় কথা বলেছি। তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে মাজারগেটের প্রধান সড়কের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।’ আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খবর না নিয়ে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, আজ শনিবার সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।
গত নভেম্বরে ভাস্কর্যটি স্থাপন করার পর থেকেই ধর্মভিত্তিক একটি গোষ্ঠী আন্দোলন করে আসছে। আর ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে রাতেই বিক্ষোভ করে গণজাগরণ মঞ্চসহ প্রগতিশীল কয়েকটি সংগঠন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে বাম ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো। গতকাল জুমার নামাজের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বাম সংগঠনগুলো। নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ধর্মীয় সংগঠনগুলো।
এদিকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য এ্যানেক্স ভবনের পেছনে রাখার পর থেকে সেখানে কোনও গণমাধ্যম কর্মীকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এর আগে সকালে বেশ ক’টি টেলিভিশন ভাস্কর্য অপসারণের সংবাদ সরাসরি প্রচার করলে সোস্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এরপর থেকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। মাজার সংলগ্ন গেটটি খোলা রাখা হলেও সেখানে অবস্থান নেয় পুলিশ। জানা গেছে, ভাস্কর্য সরানোর সংবাদ প্রতিটি গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করলে পুলিশের উপর চাপ বেড়ে যায়। ফলে সকাল ১১টার পর থেকে আদালত চত্বরে প্রবেশে কড়াকড়ি শুরু করে পুলিশ। রমনা বিভাগ পুলিশের দাবি, উপরের চাপে তারা কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, আদালতের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী আদালত ও এর আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ কারণে আদালতের ভেতরে বিশেষ করে অপসারিত মুর্তির কাছে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ