পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক সেন্ট থমাস চার্চ
খ্রিস্টীয় দর্পণ ডেস্ক
সেন্ট থমাস চার্চ নামে পরিচিত এই চার্চটি ‘চার্চ অব বাংলাদেশ’ এর অন্তর্ভুক্ত একটি চার্চ। চার্চটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৯ সালে। অর্থাৎ প্রায় ২০০ বছর আগের তৈরী এই সেন্ট থমাস চার্চ। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক ভিক্টোরিয়া পার্ক (বর্তমান বাহাদুর শাহ্ পার্ক) এর উত্তর দিকে ৫৪ জনসন রোডে অবস্থিত গির্জাটি পুরান ঢাকার স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর অন্যতম। এটি ঢাকার সবচেয়ে পুরনো গির্জাগুলোর একটি। উনিশ শতকে এই সেন্ট থমাস চার্চ ছিল শহরের অন্যমত ইমারত।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বেশ কিছু ইংরেজ কর্মচারী-কর্মকর্তারা এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। তাদেরই প্রার্থনার প্রয়োজন বোধে ১৮১৯ সালে ঢাকার কারাগারে বেশ কিছু কয়েদির মাধ্যমে এ গির্জাটি গড়ে তোলা হয়। প্রেরিত সাধু থমাস যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেছিলেন, তার নামানুসারেই এ গির্জাটির নামকরণ করা হয় ‘থোমাস গির্জা’। সেন্ট থমাস চার্চ প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর কোলকাতার বিশপ রোন্যাল্ড হারবার চার্চটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভোধন করেন। ১৮৬৩ সালে এ গির্জাটির চূড়ায় একটি ঘড়ি স্থাপন করা হয়। একসময় পুরান ঢাকাবাসী এ বিশাল ঘড়িতেই সময় দেখত। কিন্তু কালের আবর্তে পর্যাপ্ত যতœ ও মেরামতের অভাবে ঘড়িটি আজ বন্ধ হয়ে আছে। উল্লেখ্য গির্জাটির চূড়ায় অবস্থিত ঘড়িটি এবং লন্ডনের হাউস অব পার্লামেন্ট এর চুড়ায় অবস্থিত ঘড়িটি বিশ্ব বিখ্যাত ঘড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিগ বেন’ এর নির্মিত। এবং তাদের এই সিরিজের ঘড়ি পৃথিবীতে মাত্র এই ২টি টিকে আছে।
আয়তাকার ঢালু ছাদ বিশিষ্ট এই চার্চ বিল্ডিং দুইটি ধাপে সম্পন্ন। দরজার এবং জানালার উপরের অংশের খিলানে গোথিক ষ্টাইল সুস্পষ্ট এবং বিল্ডিং এর প্রতিটি প্রান্ত গোথিক ডিজাইন দিয়ে চিহ্নিত করা। ছাদগুলো শক্ত লোহা আর মজবুত প্রস্বস্ত কাঠের পাটাতনে সুন্দর ভাবে তৈরী। ফ্লোরে সুদৃশ্য টাইলস দৃশ্যমান। সাদা প্লাষ্টার করা লোহা আর ইটের তৈরী সেন্ট থমাস চার্চ বিল্ডিংটি প্রায় দুই শতক পরে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বর্তমানে ‘চার্চ অব বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনটি তত্ত্বাবধানে গির্জাটির দেখাশোনার কাজ চলছে। এ সংগঠনটি স্থানীয় গরিব শিশুদের জন্য সেন্ট থমাস চার্চে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করে আসছে। অনেকদিন থেকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে গির্জা প্রাঙ্গণে গরিব শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়াও সংগঠনটি এসব শিক্ষার্থীদের জন্য টিফিন, স্কুল ড্রেস, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদির ব্যবস্থাও করে থাকে।