প্রতিটি ইউনিয়নে ইফতার আয়োজন ও সরকারের উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তির নির্দেশ নির্বাচনি প্রচারণায় রমজানে সব দল মাঠে নামছে
সরকারের খারাপ কাজ তুলে ধরবে এবং ভোট চাইবে অন্য রাজনৈতিক দল
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : রমজানে রাজনীতির মাঠে সরব থাকতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দল প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, রমজানের প্রথমদিন থেকেই দলীয় এমপি ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেন প্রতিটি ইউনিয়নে ইফতারের আয়োজন করে। এসব আয়োজনে সরকারের বিগত সময়ের সব উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ের বিভিন্ন অপকর্মের কথা তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা দলের মন্ত্রী-এমপিদের রমজানে নির্বাচনি এলাকায় বেশি বেশি সময় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি গত সপ্তাহে দলের বর্ধিত সভায়ও বলেছেন, ‘রোজা আসছে, মানুষের কাছে যান। এই সময় মানুষের মন কোমল থাকে। নিজের ও সরকারের উন্নয়ন কাজ এবং ভবিষ্যতের কাজ তুলে ধরবেন।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজান মাসজুড়েই ইফতার রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তারা। এবার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, র্কটনীতিক, বিভিন্ন পেশাজীবী, আলেম-ওলামা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য আলাদা করে ইফতারের আয়োজন করা হবে। যদিও এখন পর্যন্ত এর কোনো সূচি তৈরি করা হয়নি। কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূলে দলের প্রতিটি ইউনিট নিজস্ব কার্যালয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করবে। এমন নির্দেশনা ইতিমধ্যে তারা পেয়েছেন। দলীয়ভাবে ছাড়াও নেতারা নিজ নিজ উদ্যোগে ইফতার আয়োজন করবেন। নির্বাচনি এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, এতিমখানাসহ এ রকম প্রতিটি জায়গায় চলবে বিশেষ ইফতার আয়োজন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত রমজানেও রাজনৈতিক দলগুলো ইফতার আয়োজন করে থাকে। তবে গত কয়েকবছর উৎসব ছিল কম। আগামী দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার ইফতার রাজনীতি বেশ সরব হবে। যদিও আগাম নির্বাচন না হলে ২০১৮ সালে আরেকটি রমজান পাওয়া যাবে। তারপরও এবারের রমজানকেই নির্বাচনি প্রচারণার মোক্ষম সময় বলে মনে করছে দলগুলো। সবাই এই একমাসে জনগণের সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বরাবরের মতোই এবারও দলের পক্ষ থেকে ইফতারের আয়োজন করা হবে। তিনি জানান, নিজের নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে ইফতার পার্টি হয়। সেখানে সরকারের অর্জন এবং উন্নয়নগুলো আমরা তুলে ধরা হবে। শেখ হাসিনাও রমজান মাসজুড়ে ইফতার আয়োজন করবেন। বরাবরের মতোই এবারও তিনি প্রথম দিনের ইফতার করবেন এতিমদের সঙ্গে। দ্বিতীয় দিনটি পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনৈতিক, সামরিক বেসামরিক আমলা, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, বুদ্ধিজীবী এবং আলেম-ওলামাসহ সব ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করবেন তিনি।
সূত্র বলছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও আরও সক্রিয় করে রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। ইফতারে ঘরোয়া রাজনীতির মধ্য দিয়ে অনেক কাজ শেষ করতে চায় তারা।
এবারের রমজানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজ উদ্যোগে রাজধানীতে ৫টি ইফতারের আয়োজন করছেন। এর মধ্যে একটি ইফতার দলীয় নেতাদের সম্মানে আয়োজন করছেন তিনি। এর বাইরেও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর ইফতারেও অংশ নেবেন খালেদা জিয়া। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারসহ নানা ইস্যুতে তিনি বক্তব্য রাখবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হবে। আর ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিও অংশ নেবে। যেখানে বিএনপিই জয়ী হবে। দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের পক্ষ থেকে যে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে আশা জাগিয়েছে। এবারের ইফতার পার্টিতে এ বিষয়ে আলোচনা করবে দলটি।
রমজানে দল গোছাতে সময় দেবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রমজানে রাজপথেও দলের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। তাই রমজানজুড়ে ইফতার পার্টি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে জাতীয় পার্টি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠন। এরশাদ সেখানে উপস্থিত থাকবেন। প্রথম রমজানে আজ গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে এতিম শিশুদের সঙ্গে ইফতার করবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৩ জুন কূটনীতিক, রাজনীতিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুলশানের ওয়েস্টিনে ইফতার করবেন তিনি। বাকি প্রায় প্রতিদিনই দলীয় ইফতারে অংশ নেবেন এরশাদ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী