ম্যানচেস্টারে আত্মঘাতী হামলার পূর্বমুহূর্তে সালমানের ছবি প্রকাশ করল ব্রিটিশ পুলিশ
রাশিদ রিয়াজ : কালো ট্রাউজার ও জ্যাকেট পরিহিত আত্মঘাতী বোমাহামলাকারী সালমান আবেদি পকেটে বোমার ট্রিগারে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার পিঠে ব্যাকপ্যাকে বোমা। ম্যানচেষ্টারে আরিয়ানা আন্দ্রের কনসার্টে বোমা বিস্ফোরণের ঠিক আগমুহূর্তে সালমানের এমন ছবি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো। সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে বোমা বিস্ফোরণের মোক্ষম মুহূর্তের জন্যে সালমান আবেদি অপেক্ষা করছেন। তার চেহারা ভাবলেশহীন।
কতখানি ঠান্ডা মাথায় সালমান ম্যানচেষ্টারে আত্মঘাতী বোমা হামলার পূর্ব মূহুর্তে নিশ্চল ছিলেন, ২২ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা ও শতাধিক আহত হবার এ ঘটনার আগে তার মনে কোনো ভাবান্তর যে ছিল না তা ওই ছবিতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে মাদক ব্যবহার করতেন সালমান এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হামলার আগে কোনো ধরনের মাদক সালমান ব্যবহার করেছিলেন কি না তা তার ছিন্নভিন্ন লাশের ময়নাতদন্ত থেকে এখনো পাওয়া যায়নি। সালমানকে বোমাহামলার পূর্বমুহূর্তেও শান্ত ও এধরনের হত্যাকা-ের কোনো স্পৃহা তার চেহারায় ফুঁটে ওঠেনি বলে মিরর’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।
ব্রিটিশ মিডিয়া দি সান একই ধরনের প্রতিবেদনে বলছে, কালো সানগ্লাস পরিহিত সালমানের মুখে দাঁড়ি, মাথায় বেসবল ক্যাপ, জিন্সের ট্রাউজার ও তার অসাধারণ নাইকি এয়ার জর্ডান ট্রেইনারের আয়োজন দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার বাম পকেটেই বোমার ট্রিগারে তার আঙ্গুল হত্যার মুহূর্ত খুঁজছে। তার পিঠে ছিল কারিমর রাকস্যাক বা ব্যাকপ্যাক। ভিক্টোরিয়া রেল স্টেশন থেকে সালমান বামে অগ্রসর হয়ে ৬৫ গজের মত এগিয়ে যায় এবং কনসার্ট স্থলে পৌঁছে যায়।
ওই রাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে এ ছবি উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডেইলি মেইল তার প্রতিবেদনে বলছে, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের মিনিট খানেক আগের ছবি এটি। গ্রেটার ম্যানচেষ্টার পুলিশ এ ছবি প্রকাশ করেছে। সালমানের আপাদমস্তক ছিল কালো পোশাকে ঢাকা। পুলিশ বলছে তদন্তে আরো নতুন তথ্য পাওয়া গেছে যা প্রকাশ করা হবে।
মিরর বলছে সালমানের মুখে কিছুটা আবেগ লক্ষ্য করা গেছে। কারণ আত্মঘাতী বোমা হামলার ব্যাপারে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। তার বাম হাত পকেটে লুকানো বোমার ডেটোনেটারে ওপর ছিল। সিসিটিভিতে পাওয়া ম্যানচেষ্টার বোমা হামলার অন্য ছবিগুলো দেখার মত নয়। সালমানের চালচলন দেখে তাকে একজন নিরীহ ছাত্রের মতই লাগছিল। কিন্তু তার কর্ম বিশ্বকে হতাশ করেছে এবং ২০০৫ সালের ৭ জুলাই লন্ডনে বোমা হামলার পর এ হামলা ছিল আরেক বড় হামলা ও সারা ব্রিটেনে সর্বাধিক সন্ত্রাসবিরোধী তদন্ত শুরু হয়েছে।
মিরর প্রতিবেদনে আরো বলছে, গ্রেটার ম্যানচেষ্টার পুলিশ এ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে দিনরাত ১ হাজার গোয়েন্দাকে কাজে লাগায় যারা অন্তত ওই শহরের ১৪টি স্থান চিহ্নিত করতে সমর্থ হন এবং সেসব স্থান থেকে এ হামলার দেড়হাজার গতিবিধি তারা বিশ্লেষণ করে এ আত্মঘাতী বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতদের একাধিকি ক্লু ও বড় একটি নেটওয়ার্কের জড়িত তাকার বিষয়টি উদঘাটন করেন। ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং তারা এ হামলার সঙ্গে কিভাবে জড়িত ছিল তা ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে নিরাপত্তা সতর্কতা সর্বোচ্চ পর্যায় ‘ক্রিটিক্যাল’ থেকে একধাপ নামিয়ে ‘সিভিয়ার’ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আত্মঘাতী এ বোমা হামলায় ১২০ জন আহতদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২০ জনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
এক ব্রিটিশ গোয়েন্দা বলেন, সালমান আবেদির শেষ অবস্থান ছিল কনসার্টস্থলের অদূরে সিটি সেন্টার গ্রানবি রো ফ্লাটে। এবং সেখানেই সালমান আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ফ্লাটটি ভিক্টোরিয়া রেল স্টেশনের পাশেই। সিটি সেন্টার থেকে কুড়ি মিনিট পথ সালমান হেঁটে কনসার্টস্থলের কাছে চলে আছেন। সম্ভবত সে পিকাডেলি গার্ডেন, আর্নডেল সেন্টার ও প্রিন্টওয়ার্কস কমপ্লেক্স অতিক্রম করে। মিরর/মেইল/দিসান