প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
আনোয়ারুল করিম: বিশ্বের প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় প্যারিসে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ থেকে যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার করা এক টুইটে এ ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে উন্নত দেশগুলোর সম্মেলন জি-৮’র বৈঠকেও তিনি এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বার্তা সংস্থা সিএনএন বুধবার সন্ধ্যায় এই খবর জানিয়ে বলে, জি-৮ বৈঠক থেকে ফিরে ট্রাম্প বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিষয়ক প্রশাসক স্কট প্রুইটের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই ট্রাম্প টুইটে বলেন, ‘প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তি নিয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্তে আসছি। আমেরিকা আবার মহান হবে।’ ট্রাম্প অবশ্য তার নির্বাচনী প্রচারের সময়ই এ চুক্তি থেকে সরে আসার কথা বলেছিলেন।
ইতালির সিসিলির তাওরমিনাতে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-সেভেনের শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচি ছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। জি-সেভেনভুক্ত ছয়টি সদস্য রাষ্ট্রই এ চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে তাদের অবস্থান সম্মেলনে পরিষ্কার করেনি। সম্মেলনে জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর নেতারা চেষ্টা করেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে কোনো অঙ্গীকার আদায় করতে পারেননি। বরং ওই সময় ট্রাম্প বলেন, আলোচিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানাবে, নাকি প্রত্যাখ্যান করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী সপ্তাহে। ট্রাম্প অবশ্য তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময়ই এ চুক্তি থেকে সরে আসার কথা বলেছিলেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসের ‘কপ-২১’ জলবায়ু চুক্তিটিকেও পুরোনো ধারণা বলে নির্বাচনী প্রচারের সময় মত প্রকাশ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যুক্তি দেখিয়ে ট্রাম্প জলবায়ু নীতি থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছিলেন। কারণ, এ চুক্তির আলোকে যে জলবায়ু তহবিল গঠিত হয়, তার বড় জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। এই তহবিল থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সাহায্য পায়।
প্যারিস চুক্তিতে পৃথিবীব্যাপী ৫৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাসের বিষয়ে বলা হয়েছিল। চুক্তিটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্বাক্ষর করেছিলেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় ওই চুক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন পরিবেশবাদীরা। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বে কয়লার উত্তোলন কমিয়ে আনার কথা। কারণ, কার্বণ নিঃসরণে কয়লার ভূমিকা মুখ্য। আর জলবায়ু রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা অধিক তাপ উৎপাদন ও প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে শক্তি উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বন্ধের বিরুদ্ধে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়লার উত্তোলন বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন।
এদিকে ট্রাম্পের এমন মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক দপ্তরের প্রধান প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের স্বার্থেই প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে এর সুফল পাবে সবাই। আর চুক্তিটির বিষয়ে সবারই সম্মতি আছে। এমনকি তেল কোম্পানিগুলোরও।’
সিএনএন মন্তব্য করেছে, “তবে যত যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা ছাড়া প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন অসম্ভব। কিন্তু অবস্থা দেখে এমন মনে হচ্ছে, অনড় ট্রাম্পকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। তবুও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় জলবায়ু বিষয়ে ট্রাম্পের দিকেই তাকিয়ে বিশ্ব।”