সাক্ষিদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ চান প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ : আজ সংসদে উপস্থাপন হতে যাচ্ছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট। আর এ বাজেটে সাক্ষিদের জন্য বরাদ্দ চান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে বলা হয়, এদেশে ফৌজদারি মামলা বিচার নিষ্পত্তি বিলম্বের ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে সাক্ষী সময়মতো আদালতে উপস্থিত না হওয়া। সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না থাকায় বহু ঘৃণিত ও জঘন্যতম অপরাধের বিচার কার্য দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। জঙ্গি সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর অনেকগুলো মামলাও সাক্ষীর অভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। আর সাক্ষী অনুপস্থিত থাকার মূল কারণ হলো সাক্ষীকে নিজ খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জেলা শহরে এসে সাক্ষ্য দিতে হয়। এতে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে জেলা শহরে এসে হোটেলে অবস্থান করে নিজ খরচে সাক্ষ্য দেওয়া অনেক কষ্টকর ও ব্যয়সাধ্য। এছাড়া অনেক সরকারি সাক্ষী বিশেষ করে পুলিশ চাকরি থেকে অবসরের পর ভিন্ন জেলায় গিয়ে নিজ খরচে সাক্ষ্য প্রদানে অনীহায় থাকেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘দি কোড অব ক্রিমিনিাল প্রসিডিউর’ ১৮৯৮ এর ৫৪৪ ধারার বিধান অনুযায়ী ফৌজদারি মামলার ফরিয়াদি বা সাক্ষীর খরচ সরকার কর্তৃক ব্যয় নির্বাহে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাক্ষীর যাতায়াত এবং জেলা শহরে অবস্থানের জন্য ব্যয়িত অর্থ সরকারিভাবে বহন করা হলে তারা সাক্ষ্য প্রদানে উৎসাহিত হবেন। এতে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
চিঠিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে বর্তমানে সাক্ষীর ব্যয় সংক্রান্ত কোন অর্থনৈতিক কোড নেই। তাই উক্ত বিভাগের অনুকূলে সাক্ষীর ব্যয় নির্বাহের জন্য নতুন অর্থনৈতিক কোড সৃষ্টিকরে উক্ত খাতে অথবা ৪৮৯৯-অন্যান্য ব্যয় (সাক্ষীর খরচসহ) খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, কোন দেশের শিল্পায়নে বিদেশী বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে থাকে তার অন্যতম একটি হলো ওই দেশের বিচার বিভাগের দক্ষতা ও কাঙ্খিত সময়ে বিচার প্রদানের সক্ষমতা। বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতার উপর একটি দেশের সভ্যতার প্রকৃত চরিত্র পরিস্ফুট হয়ে উঠে। যে কোন দেশের সরকারের কৃতিত্ব পরিমাপ করার সর্বোত্তম মাপকাঠি হচ্ছে তার বিচার বিভাগের দক্ষতা ও যোগ্যতা। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল রাখতে বিচার বিভাগের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।