সংশোধনী নিয়ে আপিলের শুনানি শেষ, রায় যে কোনো দিন শুধু বিচার বিভাগ নয়, দেশের ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করতে হবে : প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আমরা যখন সংবিধানের ব্যাখ্যা দিব তখন পুরো সংবিধানকেই পর্যালোচনা করবো। আমরা শুধু বিচারকের বিষয়ে চিন্তা করছি না। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। যদি অভিভাবকই হই তাহলে শুধু বিচার বিভাগই নয়, দেশের ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করতে হবে।
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে গতকাল বৃস্পতিবার এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। গতকাল একাদশ দিনের মতো প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার শেষ দিনে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। শুনানি শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রাখেন।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট অর্থাৎ শাসন বিভাগ, আইন সভা ও বিচার বিভাগ সবই সংবিধান দ্বারা সৃষ্ট। নির্বাহী বিভাগ আইন সভা বা বিচার বিভাগ কেউ সার্বভৌম নয়।
প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ কেবল সংবিধানের আইন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হওয়ার বিধান সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদসমূহ বলতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের গণপরিষদে যে সংবিধান গৃহিত হয়েছিল সেই অনুচ্ছেদ সমূহকেই বুঝাবে। সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ সমূহ ভাল বা মন্দ বা তাতে মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটা রক্ষিত হয়েছে বা হয়নি সে কথা বলার এখতিয়ার বিচার বিভাগের নেই। কারণ বিচার বিভাগ সংবিধান দ্বারা সৃষ্ট। সৃষ্টি তার স্রষ্টার ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা রাখে না। সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ সমূহ সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কেবলমাত্র যখন তা সংশোধন হয় তখন সে সংশোধন সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কি না তা বিচার করার এখতিয়ার উচ্চ আদালতের রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারপতিদের অপসারণ বিষয়ে কি পদ্ধতি গৃহিত হবে তা একটি নীতি-নির্ধারণী বিষয়। এই নীতি নির্ধারণের বিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে না। পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে এ সংক্রন্ত বিশেষ কমিটি ২৭টি সভা করেছে। আইনজীবী, সাবেক বিচারপতি, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আপনার সঙ্গে আছি। আপনি যদি অধস্তন আদালত বিষয়ক আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি তো আইন প্রণেতা নই। প্রধান বিচারপতি বলেন, শুধুই কি ১১৬তে হাত দিয়েছেন? পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশন বিষয়ক অনুচ্ছেদ নিয়েও আপনাদের চিন্তা করতে হবে। এসকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাধীনতার প্রশ্নটি জড়িত। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জনগণ কোথায় গেল? সবার ওপরে জনগণ। জনগণ আছে বলে সংসদ, বিচার বিভাগ আছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণের কল্যাণের কথাই আমরা চিন্তা করছি। জনগণের অধিকার রক্ষায় অধস্তন আদালতের বিচারকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য আমাকে অধস্তন আদালত পরিদর্শনের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ৯৬ (৩) এ বলা নেই যে, বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি সংসদ তদন্ত করবে। ষোড়শ সংশোধনীর ফলে প্রতিস্থাপিত অনুচ্ছেদ ৯৬ (৩) এর পরিপ্রেক্ষিতে যে আইন প্রণীত হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই আইনের বিধান বিবেচনা করে বোঝা যাবে যে, অপসারণের বিধান তদন্তের বিষয়ে কোন ব্যক্তিদের সংযুক্ত করা হবে। তদন্ত নিরপেক্ষ হবে কি না বা সে আইনের দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে কি না। কাজেই ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত ৯৬ (২) এবং ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের পরিপন্থী কিনা তা বিচার করার অবকাশ নেই। সুতরাং বর্তমান রিট আবেদনটি প্রি ম্যাচিউর। এটি নাকচ করা উচিৎ ছিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, বিচার বিভাগ সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। নিজেদের বিচার নিজেরা করাটা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। এ পদ্ধতিতে প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।অন্যান্য বিচারপতিদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। বিচারপতিরা যেহেতু একসঙ্গে বহুদিন কাজ করছেন, একে অপরের পরিচিত। সেহেতু তাদের অসদাচরণ ও অসমতা বিচারের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের পক্ষে তাদের আবেগ অনুভূতির ঊর্ধ্বে ওঠা সম্ভব নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, যেমন চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে। বিএমডিসি কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বা শর্ত ভঙ্গের কারণে আজ পর্যন্তত এমন নজির নেই। তাই আইন করার আগে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা সমিচিন হবে না। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রীরা যদি কোনো অসদাচরণের কারণে অভিযুক্ত হন তাহলে রাজনৈতিক কারণেই তিনি তার পদ হারান। তাছাড়া সংসদের মেয়াদকাল শেষ হলে বা সংসদ ভেঙে গেলে পুনরায় তাদের জনগণের সামনে যেতে হয়। জনগণই তাদের বিগত বছরগুলোর কর্মকা-ের বিচার-বিবেচনা করে এবং জনতার আদালতেই তাদের বিচার হয়ে যায়।
এসময় বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, এটা ব্যক্তির বিচার করা হয়। আর সব বিভাগতো নিজেদের বিচার নিজেরাই করে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন জেলা জজ যদি অসদাচারণ, অনিয়ম করে তবে তার বিচার তো আপনারাই করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা ঠিক না। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এক স্কুলকে বাদ দিয়ে আরেক স্কুলকে এমপিও ভুক্ত করে থাকেন। বিভন্ন পরিপত্র জারি করেন। এ নিয়ে হাজার হাজার মামলা আমাদের সামনে আসে। তখন তো আমরাই বিচার করি। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, ক্ষমতা যদি নিয়ে যান তাহলে জাজদের কে তদারকি করবে। কোনো বিচারপতিই প্রধান বিচারপতির অধীন না। তারা স্বাধীন। কেউ মানবে না। বিচারকরা ১০টার পরিবর্তে সাড়ে ১০টায় বসলো কে দেখবে? সংসদ সদস্যরা এসে দেখবে ?
প্রধান বিচারপতি বলেন, কয়দিন আগে ভারতে কি হয়েছে? হাইকোর্টের একজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সে তো পাগল। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, এখানে পাগল নেই কে জানে। তখন বুড়ো আঙুল দেখাবে। প্রধান বিচারপতি কি করবে? প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি বলেছেন, যে কোনো নাগরিক একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন। এটা হলে তো শেষ করে দেবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শেষ হবে কেন? আজকে যদি মার্শাল ল’ প্রক্লেমেশন দ্বারা যেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান করা হয়েছে। তা যদি রাখা হয় তা হবে ইতিহাসের বিরাট ভুল। আপনারা কেন সংসদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না? প্রধান বিচারপতি বলেন, এধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনারা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, মার্শল ল’ যদি বাদ দেন তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? তাহলে তো চতুর্থ সংশোধনীতে গিয়ে দাঁড়াতে হবে তাই নয় কি? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চতুর্থ সংশোধনী কেন? আমরা তো আদি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদেই যাবো। তখন ইমান আলী বলেন, না, মার্শাল ল’ এর আগে কি ছিল সেটা বলুন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এখনও শুনছি। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
এরপর মনজিল মোরশেদ বলেন, পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের কিছু অভিমত নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিল। কিন্তু ৯৬ অনুচ্ছেদের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো রিভিউ আবেদন করেনি। শর্তসাপেক্ষে মার্জনা করেছে বলে রাষ্ট্রপক্ষ যা বলছে, তা সঠিক না। রাষ্ট্রপক্ষ জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে রিভিউই করেনি। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যখন কোনো রায়ে সিদ্ধান্ত দেয় সেই সিদ্ধান্ত বিলুপ্ত করে সংসদ কোনো আইন করতে পারে না। এই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যে বিধান, এটি ১৬কোটি জনগণ না হলেও ১০ কোটি লোক এর পক্ষে আছে।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের সংশোধন নিয়ে আলোচনা না করে হাইকোর্ট তার রায়ে কোন ব্যবস্থা ভাল সেটা নিয়ে আলোচনা করেছে। যদি হাইকোর্ট সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে রায়ে আলোচনা করতো সেটাই ছিল যুক্তিযুক্ত। কারন শুধুমাত্র সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ভাল কি না সেটা এই মামলার বিচার্য বিষয় নয়। এই ব্যবস্থা উঠে গেলে কি ক্ষতি হবে তা নিয়েই হাইকোর্টের রায়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের ওপর কেন এত অবিশ্বাস? তার কোনো উত্তর রায়ে কেউ দিতে পারেনি। এ সংসদের প্রতি অবিশ্বাস, অনাস্থা আনা দুঃখজনক।
মুরাদ রেজা বলেন, আদি সংবিধানে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা যদি মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে থাকতে পারে তাহলে এমন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যে,এই অনুচ্ছেদকে সাংঘর্ষিক বলা হচ্ছে? সবসময়ই যুক্তি এসেছে মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যায় না। তখন আল্ট্রভাইরাস না হলে হঠাৎ এখন কেন আল্ট্র ভাইরাস হবে? সংবিধানের মূল অংশের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন,সামরিক শাসনের কারণে একটি কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছিল। তখন আমরা সুপ্রিম কোর্টের কোনো সাহায্য পাইনি। একজন প্রধান বিচারপতি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন। সেই কালো অধ্যায়ের সময়ের করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্ট রেখে দিল। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা কোনোভাবেই মার্শাল ল’এর অধীনের ফিরে যেতে চাই না। মুরাদ রেজা বলেন, তখনতো বিচার বিভাগের কেউ সাহস করে বলেনি, কেন জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে বলবো না?
প্রধান বিচারপতি বলেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাওয়ার কথাই তো বলছেন। সংসদ ইচ্ছামত আইন প্রণয়ন ও সংবিধানের সংশোধন করতে পারবে, এটাই তো বলছেন? মুরাদ রেজা বলেন, ৯৬ অনুচ্ছেদ আগে যা ছিল চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথমে সেখানে হাত দেওয়া হলো। এটা মৌলিক কাঠামোর অংশ ছিল না বলেই সেখানে হাত দিতে পেরেছিল। তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, তাহলে কি ৯৬ ওই অংশটুকু অসাংবিধানিক বা সাংঘর্ষিক ছিল? মুরাদ রেজা বলেন, এখন পর্যন্ত এটা কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। চাইলে কেউ চৗালেঞ্জ করতে পারে। কিন্তু এরপর সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধনীতে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছি। মুরাদ রেজা বলেন, কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্ট তো বলেছে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট সবসময়ই সংবিধানের সঙ্গে ছিল। যখনই কোনো অবৈধ হস্তক্ষেপ হয়েছে আপনারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ৯৬ অনুচ্ছেদে আপনারা মার্জনা করেছেন। বৈধ হলে কি সেটা মার্জনা করার প্রয়োজন ছিল? সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অবৈধ ছিল বলেই আপনারা মার্জনা করেছেন। ওই সংশোধনী যদি মৌলিক কাঠামোর অংশ হতো তাহলে মার্জনা করার প্রয়োজন হতো না। তিনি বলেন, মার্জনা না করলে আপনা আপনি জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা চলে যেতো। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হলো কষ্টিপাথর। কোনো সংশোধনী অসাংবিধানিক কি না সেটা মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই উল্লেখ করে মুরাদ রেজা বলেন, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকদের মধ্যে এত ভয় কেন? আপনারা শপথই নিয়েছেন ভয়-ভীতির উর্ধ্বে ওঠে বিচার করার জন্য। আপনাদের সামনে আলো ছাড়া অন্ধকার নেই। পেছনে কোনো খড়গ নেই। তারপরও কেন এত ভয়? ভয়-ভীতি থাকলে তো শপথ থাকে না। সংবিধান অনুযায়ী আপনাদের বিচার করে যেতেই হবে।
মুরাদ রেজা বলেন, ফ্লোর ক্রসিংয়ের প্রশ্নটা তখনই আসবে যখন ইমপিচমেন্টের প্রশ্ন থাকে। ইমপিচমেন্ট শুধু রাষ্ট্রপতিকে করা হয়। সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আপনাদের আরও বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। সংসদকে চ্যালেঞ্জ বা অপমান করার ক্ষমতা কারো নেই। বিচার বিভাগেরও নেই। সংসদকে অপমান করবেন না। প্রধান বিচারপতি বলেন, কে অপমান করেছে বলুন। তখন মুরাদ রেজা আদালতে মতামত দেওয়া অ্যামিকাস কিউরিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, একজন বাদে সবাই। তারা তো আদালতের বন্ধু। তাদের আলোচনা হওয়ার দরকার ছিল সাবজেক্টটিভ, অবজেক্টটিভ না। তারা উন্নত মানের অ্যাডভাইস দিলে আপনারা উন্নত মানের রায় দিতে পারতেন।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি কি এগুলো বলার জন্য এসেছেন? রিপ্লাই দেন। অমরা তো হিউম্যান বিং ভুল হতেই পারে। এজন্যইতো লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করতে বলেছি। বিচারপতি ওয়াহাব মিঞা বলেন, অ্যামিকাস কিউরিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি এটা বলা ঠিক না। তারা ভুল না ঠিক বলেছে সেটা আমরা দেখবো। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আদালত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। সম্পাদনা-হুমায়ুন কবির খোকন