আওতা বাড়ছে সামাজিক সুরক্ষার কিছু ক্ষেত্রে বাড়বে ভাতা
হাসান আরিফ : বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও হিজড়াসহ পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে এবার ২৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৬ শতাংশ।
গতকাল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের দুস্থ, অবহেলিত, সমস্যাগ্রস্ত, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আমরা নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে জোরদার আছে, আগামীতেও অব্যাহত রাখব।
বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ মোট ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৫ হাজার করে মোট ১০ হাজারে বৃদ্ধি করা হবে।
অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে, যেখানে মাসিক ভাতা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি করে ‘রিসোর্স সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা এবং সম্ভব সব ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি হওয়া তথ্য ভা-ার ব্যবহার করে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র দেওয়া পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সাভারে ১২ একর খাস জমির উপর আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মুহিত। দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬ লাখ করা হবে। কর্মজীবী স্তন্যদায়ী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হবে ২ লাখ। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার করা হবে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা খাতে বরাদ্দ ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হবে। বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ বা বয়স্ক ভাতার বরাদ্দ ৬ কোটি ৩২ লাখ থেকে বাড়িয়ে করা হবে ২৭ কোটি টাকা। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি খাতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং খাদ্য-দ্রব্যের পরিবর্তে জনপ্রতি এককালীন নগদ ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা প্রদান কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিদ্যমান মাথাপিছু সম্মানী ভাতার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।