বাজেটে আবারও অবহেলিত স্বাস্থ্যখাত
শেখ মিরাজুল ইসলাম
বাজেট নিয়ে এখন নানা পর্যায়ে আলাপ-প্রলাপ চলছে। অর্থনীতিবিদদের আলোচনাকে আলাপ ও আমজনতার বক্তব্যকে প্রলাপের পর্যায়ে ধরে নিয়ে সরকার নীরব থাকতেই ভালোবাসে। কারণ বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতির ছাত্র নয় এমন কারও বাজেটমুখী প্রতিক্রিয়ায় সরকারের কিছু যায় আসে না। বাজারে এইসব জ্ঞানী-গুণীদের পর্যালোচনার কতভাগ প্রতিফলিত হয় তা নিয়ে আলাদা গবেষণা হওয়া দরকার।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থনীতির ছাত্র না হলেও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী হিসেবে এবারো অপেক্ষায় ছিলাম স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে কতটুকু অগ্রাধিকার দেওয়া হলো তা দেখার জন্য। হায় হতোস্মি! অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করলেন। সেখানে স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ মাত্র। অর্থাৎ সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। এর আগেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। যা ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, সংশোধিত বাজেটে যা ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশে দাঁড়ায়। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল স্বাস্থ্যসেবার জন্য।
দেশে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রতি সাধারণ রোগীদের প্রত্যাশা ও চাপ। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর গুণগত ও সেবার পরিসর আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আধুনিক সেবা পৌঁছে দিতে না পারলে স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামোতে ঝুঁকির পরিমাণ দিনদিন আরও অসহনীয় হয়ে পড়তে পারে। রোগী-চিকিৎসকদের সমন্বয় ও চাহিদা মোতাবেক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুবিধাদির ভৌত অবকাঠামো আরও আধুনিকায়ন ও নবায়ন করতে না পারলে এই খাতে জনরোষ ও অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পাবে। এই সাধারণ বিষয়গুলো মাথায় রেখে যদি সরকার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট প্রণয়ন করত তবে তা অবশ্যই মোট বাজেটের কমপক্ষে দশ শতাংশে উন্নীত হতো। টাকার পরিমাণটা আসল কথা না। স্বাস্থ্যখাত এখন শিল্পখাতের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি ভর্তুকি খাতের কাঠামোয় এর বিশেষায়িত সেবা গরিব জনগণের কাছে সহজলভ্য করে তোলা উচিত। যার দরুণ বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যয় ভার ঠেকাতে যে বাড়তি অর্থ জনগণকে দিতে হচ্ছে তা তাদের বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসেবে প্রভাব ফেলছে। শুধুমাত্র পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি ফান্ডের সহায়তায় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট সীমাবদ্ধ রাখা যথেষ্ট নয়। সাধারণ চিকিৎসাসেবা হতে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসাসেবায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের আশ্বস্ত করতে এই বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। মোটা দাগে অবহেলিত স্বাস্থ্য খাতে নতুন আশার সঞ্চার এবারো হলো না। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে রোগী বনাম চিকিৎসক ব্যবস্থাপনায়।
জনগণের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে বাজেটে কোনো দায় নেই, তার জন্য সরকারের কতটুকু আগ্রহ ও সুদৃষ্টি আছে তা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান