ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বললেন হিলারী
শায়েখ হাসান : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ১৮৭ দেশ স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন হিলারী ক্লিনটন। শুধু হিলারী নয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি, এমনকি জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুক্রবার এক টুইট বার্তায় হিলারী লিখেছেন, ‘একটি ঐতিহাসিক ভুল। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ব একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। প্যারিসের প্রত্যাহারের পিছনে আমেরিকান শ্রমিক ও পরিবারগুলি বাদ পড়েছে’।
বিল ক্লিনটন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘প্যারিস চুক্তি থেকে দূরে যাওয়া একটি ভুল। জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তব। আমরা আমাদের সন্তানদের আরো বেশি ঋণী করে দিলাম। ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমাদের আরো বেশি কাজ করতে হবে। ’
জন কেরি বিষয়টির বিরোধিতা করে লিখেছেন, ‘আজ প্রেসিডেন্ট একটি বড় ধরনের ভুল করলো। এর মাধ্যমে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু করলেন তিনি।’
একই রকম মন্তব্য করা হয়েছে জাতিসংঘের অফিসিয়াল পেজ থেকেও। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তের পক্ষেই অটল রয়েছেন এবং সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে টুইট বার্তায় সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমেরিকাকে আবার মহান করো!’
প্রসঙ্গত, নতুন করে আলোচনার কথা বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘প্যারিস চুক্তি’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পরবর্তীতে ‘ন্যায্য’ চুক্তির জন্য তিনি বিশ্ব নেতাদের সাথে আলোচনায় বসবেন।
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে ১৮৭টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা তারা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখবে; এমনকি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে চেষ্টা করবে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকা ও এর জনগণকে রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালন করতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। তবে প্যারিস চুক্তি অথবা যুক্তরাষ্ট্র ও এর বাণিজ্য, শ্রমিক, জনগণ ও করদাতাদের জন্য ন্যায্য হয় এমন কোনো নতুন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বের হয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা আলোচনা শুরু করব এবং দেখব আমরা কোনো ন্যায্য চুক্তি করতে পারি কি না। আমরা যদি সেটা পারি তাহলে বেশ ভাল। আর যদি না পারি তাহলেও ভাল।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করছেন, প্যারিস চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু লাভবান হবে অন্য দেশ। এ চুক্তিতে মার্কিনিদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, এই চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে এবং চাকরি হারাবে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে ‘ট্রাম্প প্রশাসন ভবিষ্যৎকে অস্বীকার করলো।’
সিনেটের ডেমোক্রেট দলের নেতা চাক সুমেখার বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘একবিংশ শতাব্দির সবচেয়ে বাজে নীতি। কারণ এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও বৈশ্বিক অবস্থানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি এক যৌথ বিবৃতিতে প্যারিস চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের নতুন আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ