সংলাপ সফলতায় নির্বাচন কমিশনের যা করণীয়
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা নির্বাচন কমিশনের অবশ্যই কর্তব্য। কারণ নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হলো, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন বা ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। নির্বাচনে কোনো দলের সামান্য প্রভাব বিস্তার করতে দেখা গেলেও সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য যা যা করণীয় তা নিয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। এর আগেও আমি বলেছিলাম, ১০০ দিনের একটা মহাপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে, সেটা অবশ্য করেনি নির্বাচন কমিশন। অথচ এটা করা জরুরি ছিল। তবে এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি, সময় এখনো আছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যদি ২০১৯ সালে হয়, যা বিএনপিও মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়। বিএনপি ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছে না। ২০১৯ সালে যদি নির্বাচন হয় তাহলে এখন থেকে নির্বাচন কমিশনের কর্মপদ্ধতিগুলো ঠিক করে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিগুলো সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। যেমন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), যাতে ইতোমধ্যেই বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অনাপত্তি রয়েছে। আমার মনে হয়, এখানে বিএনপির আপত্তি না থাকলে, আর আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকলে বরং বিষয়টা গ্রহণযোগ্য হতো। তারপরেও আমি বলব সিদ্ধান্তটা সব দলের সম্মতিক্রমে নিতে হবে। এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত হবে না যেটা সকল দলের সমর্থন থাকবে না। সকল দলের সঙ্গে বসে তাদের কথা শুনতে হবে। তারা যেসব সমাধান দিবে, যা যা নিয়মের মধ্যে পড়বে সেগুলো অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ সফলতার জন্য কিছু বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, একটা স্বচ্ছ, সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে, যেন সেখানে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা না থাকে। নির্বাচন কমিশনের একেবারে ঘোষিত নিরপেক্ষতা থাকতে হবে। প্রার্থী যখন মনোনয়ন দাখিল করবে তখন থেকে নিয়ে যে প্রক্রিয়াটা শুরু হয়ে যাবে তখন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে একেবারেই নিরপেক্ষ থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, দেখা গেল কোনো একটা জেলায় হয়তো কোনো একজন সরকারি কর্মকর্তা সরকারি দলের পক্ষে পক্ষপাত করছেন। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা সরকার দলীয়দের সহায়তা করছেন, এমনটি ঘটতে দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বদলি করে ফেলতে হবে। আমি জানি না এই ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের কতদিন আগে থেকে থাকে কিন্তু আমার মনে হয় এই ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের ছয় মাস আগে থেকে থাকা দরকার। যেখানেই মনে হবে কোনো বিতর্কিত অফিসার আছেন বা সরকার দলের হয়ে কাজ করছেন কেউ অথবা বিরোধী দলের হয়ে কাজ করছেন তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে দেখা এবং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত করে যদি দেখা যায় যে, অভিযোগ সত্য তাহলে তাকে তখনই সেখান থেকে বের করে দিতে হবে। এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সে আবার অন্য কোথাও গিয়ে এ ধরনের কাজ করার সুযোগ না পায়। নির্বাচন কমিশনকে সবদিক বিবেচনা করে কাজ করতে হবে। সংলাপে সব দলকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান