মা ও পুলিশ কর্মকর্তা বাবা হত্যা হাইকোর্টে ঐশীর যাবজ্জীবন
এস এম নূর মোহাম্মদ : পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃতুদ-ের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পর আপিল করার কথা জানান ঐশীর আইনজীবী সুজিত চাটার্জী।
কয়েকটি কারণ দেখিয়ে সাজা কমিয়েছেন হাইকোর্ট। কারণ হিসেবে রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদ- প্রাপ্ত আসামি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া এবং মানসিকভাবে বিচ্যুতির কারণেই। এ আসামি অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী- তার দাদি ও মামা অনেক আগ থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। তার পরিবারে মানসিক বিপর্যস্তের ইতিহাস রয়েছে। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। সে এ ঘটনার সময় সাবালত্ব পাওয়ার মুহুর্তে ছিল। তার বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের নজির নেই। সে ঘটনার দুইদিন পরই স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পন করে। উদ্ভূত পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সাজা কমানো হয়।
আদালত বলেছে, তার পিতা পুলিশে ও মা ডেসটিনিতে চাকরিরত ছিলেন। তারা জীবন-জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ঐশীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেনি। তারা যখন উপলব্দি করছিল ঠিক সে সময় ঐশী উচ্চমাত্রায় নেশায় আসক্ত। শাস্তি সম্পর্কে আদালত বলেছে, মৃত্যুদ-ই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটা কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে, তা নয়। কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদ-কে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মৃত্যুদ- কমানোর কোনো গাইডলাইন নেই। এমনকি তা বিলুপ্ত করার পরিবেশ আসেনি। শিক্ষার হার বেড়েছে। জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় মৃত্যুদ- রহিত করা যুক্তি সঙ্গত নয়।
রায়ে আরও বলা হয়, সন্তানদের জন্য বাবা-মা ও অভিবাবকই হলেন প্রাথমিক শিক্ষক। এ হিসেবে- তাদের জন্য ভাল পরিবেশ ও সময় দেওয়া প্রয়োজন।
এ মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বিচারিক আদালত ঐশীকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করে। এছাড়া হত্যাকা-ে সহযোগিতার দায়ে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ঐশীর আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেয় আদালত। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ঐশী। গত ১২ মার্চ থেকে ৭ মে পর্যন্ত মোট ১৩ কার্যদিবস শুনানি হয় এ মামলায়।
আদালতে ঐশীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন- আফজাল এইচ খান ও সুজিত চাটার্জী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল ইসলাম সেলিম। সম্পাদনা : রিকু আমিরমা