কোণঠাসা কাতারের পাশে ইরান ইরাক তুরস্ক
উপসাগরীয় আমদানি হারিয়েছে ৮২ শতাংশ
বয়কটের সমর্থনে ইসরায়েল ও ওআইসি
আবু সালেহ, লিহান লিমা, জাহিদ আল-রাফি : সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা ও অর্থায়নের অভিযোগে সৌদি আরবের নেতৃত্বে অন্তত ৬টি দেশ কাতার বয়কটের ডাক দিলে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মালদ্বীপ ও লিবিয়া। এ অবস্থায় কোণঠাসা কাতারের পাশে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান, ইরাক ও তুরস্ক। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান কূটনৈতিক অস্থিরতা সমাধান করতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবে এই দেশগুলো।
ইরান এক্সপেডেন্সি ডিসারমেন্ট কাউন্সিলের প্রধান মোহসীন রেজা বলেন, বাগদাদে ইরান, ইরাক এবং তুরস্ক ওআইসির সদস্যদেশগুলোকে এই ইস্যু সমাধানের জন্য আহ্বান জানাবে। তবে বৈঠকের তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়নি।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ওমান ও ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি হ্রাস ও কাতারের সঙ্গে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক বিনির্মাণে আলোচনা করেন।
উপসাগরীয় সংকট সমাধান ও উত্তেজনা প্রশমনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, কুয়েতের আমির শেখ জাবের আল আহমাদ আল সাবাহ এবং সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এর আগে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘চলমান সংকটের মাত্রা কমিয়ে আনতে তুরস্ক উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত আছে। উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চায় তুর্কি প্রশাসন।’
এদিকে, বয়কটের ঘোষণায় প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার ও মুদ্রাতেও। জানা গেছে, উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে আমদানির ৮২ শতাংশই হারিয়েছে কাতার। দেশটির পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সৌদি আরবের অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও বাণিজ্যের হার ছিল শতকরা ৮৪ শতাংশ। সেখানে আরব দেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্যের বিনিময় মূল্যের হার ছিল ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কাতার ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে বিনিময়ের হার ছিল ৩৭.৯ বিলিয়ন।
আরো তথ্য অনুযায়ী, কাতার ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে ও আমদানির ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬৯ শতাংশ অবদান রাখত। কিন্তু বর্তমানে সৌদি আরব ও বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় সৌদিসহ বেশ কয়েকটি দেশ কাতারের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য ও আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। যার ফলে কাতার উপসাগরীয় আমদানির বেশ বড় একটি অংশ হারায়।
কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। কাতার ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তবে কাতারবিরোধী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে তেল আবিব। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, নিঃসন্দেহে এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর সহযোগী সংগঠন ওআইসিও কিছু রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছে। বয়কটের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ওআইসি এক বিবৃতিতে জানায়, রাষ্ট্রের স্থিরতা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত, বৈধ ও নীতিগত।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবাদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে সোমবার সৌদি আরব প্রথম কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। একে একে সৌদির পথ অনুসরণ করে মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং মালদ্বীপ। দেশটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ সমর্থন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর কাতার এয়ারলাইন্স ওই দেশগুলোতে সৌদি কাতারে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর কাতারের চ্যানেল আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি কাতারের সম্মানের ওপর প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়েও সংশয় থাকছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি