বরকতপূর্ণ খাবার সেহরি
রোযাদার ব্যক্তি রোযা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষভাগে সুবহে সাদিকের আগে যে খাবার গ্রহণ করে, তাকে সেহরি বলা হয়। সেহরিতে খাবারের তালিকায় যা-ই থাকুক না কেন, সেহরি অত্যন্ত বরকতময় একটি খাবার। তা ছাড়া সেহরি খাওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত। বিশেষ করে রোযাদার রোযা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষাংশে ঘুম থেকে জেগে খাবার গ্রহণ করা আল্লাহর বিধান পালনে বিশেষ তৎপরতা এবং আল্লাহর বিধানের সামনে নিজের আরাম-আয়েশকে কোরবানি করার শামিল। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোযাদারকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তাই পেটে ক্ষুধা থাকুক বা না থাকুক, সেহরি বর্জন করা মোটেও উচিত নয়। খাওয়ার চাহিদা একেবারেই যদি না থাকে, তা হলেও ঘুম থেকে উঠে সামান্য হলেও কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত। এর দ্বারা একদিকে রাসূলের সুন্নাতের ওপর আমল হবে এবং সেহরির বরকতও হাসিল হবে।
সেহরির ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে রাসূলে কারিম সা. থেকে বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিচে আলোচ্য বিষয়ে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আনাস রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : তোমরা সেহরি খাও। কারণ, সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ আল-বুখারী : ১৯২৩, সহিহ মুসলিম : ১০৯৫, ইবনে মাযা : ১৬৯২, তিরমিজি : ৭০৮) হজরত আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো, সেহরি খাওয়া।’ (মুসলিম : ১০৯৬, আবু দাউদ : ২৩৪৩, আস্-সুনানুল কুবরা : ২৪৮৭, মুসনাদে আহমাদ : ১৭৭৬২) অর্থাৎ আহলে কিতাবগণ সেহরি না খেয়ে রোযা পালন করে, অর্থাৎ তারা উপবাস চর্চা করে। তাই রাসূলের উম্মত হিসেবে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আহলে কিতাবদের অনুকরণ বর্জন করে রাসূলের সুন্নত পালন করে সেহরি খেয়ে রোযা রাখা।
দেরি করে সেহরি খাওয়া সুন্নত। অর্থাৎ রাতের একেবারে শেষভাগে সুবহে সাদিকের আগমুহূর্তে সেহরি খাওয়া সুন্নত। তবে দেরি করার অর্থ এতটা বিলম্ব করা নয় যে সূর্য উঠে যাওয়ার সন্দেহ হয়। হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খেলাম, অতঃপর নামাজে দাঁড়ালাম। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সেহরি খাওয়া ও নামাজে দাঁড়ানোর মধ্যে সময়ের কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মতো সময়ের ব্যবধান ছিল। (সহিহ আল-বোখারি : ১৯২১, সহিহ মুসলিম : ১০৯৭, মুসনাদে আহমাদ : ২১৬১৯, সুনানে দারেমি : ১৭৩৭)
অনেকের ধারণা, ফজরের নামাজের আজান পর্যন্ত সেহরি খাওয়া যায়। এ ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ, ফজরের আজান দেওয়া হয় সুবহে সাদিকের পরে। আর সেহরির শেষ সময় হলো, সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। অতএব, আজানের সময় পর্যন্ত সেহরি খেতে থাকলে, অর্থাৎ সুবহে সাদিকের পরে সেহরি খেলে রোযা হবে না।