হিলারি ও ইউনূসের লাভালাভ উন্মোচিত ও প্রমাণের অপেক্ষায়
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
ব্যক্তিস্বার্থে অর্থযোগান বিষয়ক আইন লংঘনের আলামতসহ বিষয়টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে উন্মোচিত এবং তা আগামী ১০ দিনেরও কম সময়ের মাঝে প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর হিলারি ক্লিনটন নোবেলজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদের উপর কী ধরনের প্রভাব খাটাতে অপপ্রয়াসী হয়েছেন, তার আলামত মিলেছে। তাতে ৩ পৃষ্ঠার চিঠিসহ অবশিষ্ট ২৮ পৃষ্ঠায় গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত হিলারি, ইউনূস ও অধীনস্থদের ই-মেইল রয়েছে এবং একত্রে এই ৩১ পৃষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি দৈনিক আমাদের অর্থনীতির হস্তগত হয়েছে। এই চিঠি সংবলিত দলিলটি গত ১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান চার্লস ই. গ্রেসলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স ডব্লিউ টিলারসন বরাবর ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সমিশনে পাঠান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর জেনারেল স্টিভ এ. লিনিককে অনুলিপি দেন।
ওই চিঠিটির সূচনায় একটি সাম্প্রতিক সংবাদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ, সংক্ষেপে সিজিআই-এর অর্থদাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির তদন্ত বন্ধে বাংলাদেশ সরকার ও তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও তার অধীনস্থদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগটি পুরোপুরি প্রকাশ পেয়েছে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ যদি তার মাকে দিয়ে ওই তদন্ত বন্ধের উদ্যোগ না নেন, তবে আইআরএস বা অভ্যন্তরীণ রাজস্বের তদন্ত হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হুমকি দেওয়া হয়। এ বছরের ১১ মে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে, ২০১১ সালের মার্চে তার অফিসে মিসেস ক্লিনটন ফোন করে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের দাবি জানান। এই ‘পে-টু-প্লে’ অর্থাৎ ‘খেলার বিনিময়ে অর্থের যোগান’ সংবলিত নতুন প্রমাণটি ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদানের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্ষমতাসীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের বিশেষ আনুকূল্যেরই বহিঃপ্রকাশ।
তাই ওই চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ধারা ইউএসসি ২০৮-এর উল্লেখসহ বলা হয়েছে যে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের পদক্ষেপগুলো স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের উদ্রেক ঘটিয়েছে, যেখানে তিনি আইন লংঘন করেছেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি জনগণের আস্থাকে সবিশেষভাবে ক্ষুণœ করেছেন। পাশাপাশি বলা হয়েছে যে, বিল ক্লিনটন যখন আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ছিলেন তখন থেকেই ইউনূসের সঙ্গে ক্লিনটন পরিবারের সম্পর্কের যোগসূত্র। তখন থেকেই ইউনূস কয়েক দশক ধরে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের আশীর্বাদপুষ্ট। স্বয়ং বিল ক্লিনটনের ব্যক্তিগত লবিয়িংয়ের ফলে ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান। সংবাদে প্রকাশ, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে যথাক্রমে ইউনূসের কোম্পানি ১০০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ ডলার ও ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ ডলার অনুদান দিয়েছে। ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে সেই সম্পর্ক আরো সুগভীর হয়। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৩ মিলিয়ন ডলারের অধিক জনগণের রাজস্বের অর্থ ইউনূসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার ইউনূসকে আইনগত ও বয়সের বাধ্যবাধকতায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেয়। এই সময়ে ইউনূসের সহযোগিরা, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন, হিলারি ক্লিনটন, শেরিল মিলস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একযোগে ই-মেইলে ইউনূস তদন্তে ঝুঁকে পড়েন। এই ই-মেইল ইউনূস তদন্তের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটন ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণকে পরিস্ফূট করেছে। পাশাপাশি এই ই-মেইল চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ইউনূস তদন্তের পরিসমাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক আয়োজনকে তুলে ধরেছে। একইভাবে ২০১০-২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদের ভাষ্যানুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে তার মতবিনিময় হয়েছে। তারা হচ্ছেনÑ রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি, রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা, মিশন উপ-প্রধান জন ড্যানিলোউইকজ ও ইউএস এইডের প্রশাসক রাজীব শাহ।
ফলশ্রুতিতে ওই চিঠিতে সুষ্পষ্টভাবে তিনটি বিষয়ে অর্থাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিস্টার ওয়াজেদকে আইআরএস বিষয়ক কোনো প্রকার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল কি না, বিষয়টি ইন্সপেক্টর জেনারেল বা বিচার মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে পর্যবেক্ষণে পাঠানো হয়েছিল কি না, না পাঠালে কেন হয়নি এবং এ সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল ই-মেইল পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাতে বলা হয়েছে যে, ব্যক্তিগত ও আর্থিক সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ পররাষ্ট্রনীতি ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা জলাঞ্জলি দিয়ে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের জন্য একটি স্বাধীন দেশের নিরপেক্ষ তদন্ত প্রক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের হস্তক্ষেপটি অনুপযুক্ত ছিল বলে জানান হয়েছে।
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স