আইএসের দায় স্বীকার ইরানে সংসদ, ইমাম খোমেনির মাজার ও মেট্রোতে সন্ত্রাসী হামলা, ৭ হামলাকারীসহ নিহত ১২
রাশিদ রিয়াজ: ইরানের সংসদ, ইসলামি বিপ্লবের স্থপতি ইমাম খোমেনির মাজার ও মেট্রো স্টেশনে পৃথক ৩টি সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। এসব হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার অপচেষ্টা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইরানের সংসদে ৪ ও ইমাম খোমেনির মাজারে ৩ হামলাকারীও নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে নিহত হয়। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় একযোগে এসব হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের অনলাইন আমাক’এ এসব হামলার দায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে। সন্ত্রাসীরা এ কে ফোরটি সেভেন রাইফেল, ছোট অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে এ হামলা চালায়। তাসনিম/মেহর/সিএনএন/বিবিসি
ইরান সংসদে ৪ বন্দুকধারীর একজন বোরকা পড়ে নারীর বেশে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়। তারা গুলি করে প্রথমে সংসদে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা করে।
তাসনিম বার্তা সংস্থা জানায়, ইরান পার্লামেন্টের একটি সূত্র রিপোর্টারদের জানায়, ওই সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৭ জন মারা গেছে। সন্ত্রাসীরা ৪ জনকে পণবন্দী করে রেখেছে। তবে ইরানের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন জোলফাকারি বলেন, পার্লামেন্টে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। ইমাম খোমেনির মাজারের একজন খাদেমকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।
তবে সংসদে হামলার খবর শুনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সংসদ ঘিরে ফেলে। সংসদে ঢোকার ও বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করার পর সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। শুরু হয় পাল্টা অভিযান।
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সংসদের চতুর্থ তলায় ঘেরাও হয়ে পড়া এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিজেকে উড়িয়ে দেয়। সংসদ ভবনের জানালায় এক বন্দুকধারীর ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখা যায়। তবে সংসদে হামলার ঘটনায় কোনো এমপি হতাহত হন’নি।
এদিকে, গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী বিভাগের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, তেহরানে সন্ত্রাসীদের কয়েকটি দল ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে কোনো হামলা চালানোর আগেই একটি দলের তৎপরতা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। অন্য দু’টি দল সংসদ এবং ইমাম খোমেনির মাজারে হামলা করেছে।
প্রেসটিভির খবরে বলা হয় ৪ বন্দুকধারী ইরানের পার্লামেন্ট প্রাঙ্গনে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থা জানায়, বন্দুকধারীদের হামলায় ৮ জন আহত হয়েছে। কয়েকজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, বন্দুকধারীদের গুলিতে ১ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছে। এঘটনার পর ইরানের পার্লামেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। ইরানের এক সংসদ সদস্য ইলিয়াস হজরতি জানান, পার্লামেন্টে ঢুকে পড়া ওই ৪ সন্ত্রাসীর হাতে দুটি কালাশনিকভ রাইফেল ও ছোট অস্ত্র ছিল।
ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি বলছে, ৩ বন্দুকধারী আরেকটি পৃথক হামলা চালায় তেহরানের ইমাম খোমেনির মাজারে। তিন বন্দুকধারী ইমাম খোমেনির মাজারে ঢুকে পড়ে গুলি ছুড়তে শুরু করলে মাজারের ১ জন খাদেম মারা যায়। এরপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে ৩ সন্ত্রাসী নিহত হয়।
সিএনএন বলছে, ইরান পার্লামেন্টে এধরনের হামলার ঘটনা কিভাবে ঘটল তা এখনো পরিস্কার নয়। কারণ ইরান পার্লামেন্ট অত্যন্ত সুরক্ষিত। একাধিক তল্লাশী চৌকি সেখানে মোতায়েন রয়েছে। অস্ত্রের মালিকানা বা বৈধ লাইসেন্স ইরানের মত দেশে খুবই নিয়ন্ত্রিত। ধারণা করা হচ্ছে ইরান পার্লামেন্ট বা ইমাম খোমেনির মাজারে এধরনের হামলায় অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে বন্দুকধারীদের হাতে পৌঁছেছে।
বিশেষ করে ইমাম খোমেনির মাজারে হামলার ঘটনা অত্যন্ত প্রতীকি বা তাৎপর্যপূর্ণ। ইমাম খোমেনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের স্থপতি। ১৯৭৯ সালে তিনি রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্র উৎখাত করে ইসলামী বিপ্লব কায়েম করেন এবং ১০ বছর ইরানকে নেতৃত্ব দেন। এই মাজারে দিনরাত ইমাম খোমেনির সমর্থক, অনুসারিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
সিএনএন’এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইরানে এধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বিলল। তবে শিয়া অধুষ্যিত দেশ ইরান সুন্নি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সাথে জড়িত। এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শিয়াদের ধর্মত্যাগকারী হিসেবে গণ্য করে।
গত বছর ইরান সরকার দেশটির রাজধানী তেহরান সহ বড় কয়েকটি শহরে রমজান মাসে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানায়।