ইমাম বায়যাবি এবং তাঁর তাফসিরগ্রন্থ
া মাহফুয আহমদ
আল্লামা কাজি নাসিরুদ্দিন বায়যাবি রাহ. (মৃ. ৬৯১ হি.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত প-িত আলেম। বিশেষত কোরআনের তাফসির বিষয়ে তাঁর ছিল অগাধ পা-িত্য। তাফসির বিষয়ে তিনি অত্যন্ত মূল্যবান একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটির মূল নাম ‘আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’ওয়িল’ হলেও ‘তাফসিরে বায়যাবি’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। কী আরব! কী অনারব! সর্বত্র তাঁর এই গ্রন্থটি সমানভাবে আদৃত। বিশ্বের বহু নামকরা শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি সিলেবাসভুক্ত।
তাফসিরে বায়যাবির এই ঈর্ষণীয় গ্রহণযোগ্যতার পিছনে একটি চমৎকার গল্প আছে। আল্লামা বায়যাবি রাহ. যখন তদীয় জগদ্বিখ্যাত এ তাফসিরগ্রন্থটি লিখে শেষ করলেন, ওটা নিয়ে তিনি বাগদাদে তখনকার বাদশাহের নিকট তা পেশ করার জন্যে যেতে মনস্থ করলেন। ইচ্ছে ছিল, বাদশাহ থেকে কোনো উপঢৌকন মিলতে পারে; যার দ্বারা তিনি পার্থিব কিছু (আর্থিক) সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হবেন।
যাওয়ার পথে একটা গ্রাম দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, সেখানে একজন শায়খ ছিলেন। তিনি শায়খের নিকট থামলেন। শায়খ তাঁর মেহমানদারি করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় রওয়ানা? বায়যাবি উত্তর দিলেন, বাগদাদে। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সেখানে কেন? উত্তরে বায়যাবি বললেন, আমি একটা তাফসিরগ্রন্থ রচনা করেছি। সেটা সংশোধন ও পরিমার্জনে আমি প্রচুর শ্রম দিয়েছি। আমার ক’জন মেয়ে আছে। ওরা বিয়ের উপযুক্ত। ওদের বিয়ের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমার কিছু অর্থ-কড়ির প্রয়োজন আছে, অথচ আমার কোনো সম্পদ নেই। তো আমার মনে হলো, বাদশাহর নিকট যাই। তিনি হয়তো আমার সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে আসবেন এবং আমি মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবো।
ওই শায়খ তখন জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আপনি কুরআনের এ আয়াতের কী ব্যাখ্যা করেছেন? আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ( সূরা আল ফাতিহা: ৫) বায়যাবি বললেন, আমি আয়াতটির তাফসির করেছি এভাবে যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না এবং তিনি ছাড়া আর কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি না।
শায়খ বললেন, তবে আপনি কেন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য চাইতে যাচ্ছেন?! শায়খের কথাগুলো আল্লামা বায়যাবি রাহ. এর হৃদয়ে রেখাপাত করল। তিনি বিষয়টা বুঝতে পারলেন। সেখান থেকেই তিনি ফিরে এলেন।
বাগদাদে গেলেন না। (আর রিহলাহ আল আইয়াশিয়্যাহ; আবু সালিম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল আইয়াশি [মৃ. ১০৯০ হি.], ১/২৪৯-২৫০, দারুস সুওয়াইদি, আবুধাবি)
উলামায়ে কেরাম বলেন, ইমাম বায়যাবি রাহ. এর এমন ত্যাগের কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রচিত তাফসিরগ্রন্থের এত ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দান করেছেন। তাঁর জীবদ্দশা এবং মৃত্যুর পর সর্বযুগে আলিমগণ এ গ্রন্থ আঁকড়ে ধরেছেন। বিভিন্নভাবে ওই গ্রন্থের ওপর কাজ করেছেন, টীকা-টিপ্পনী লিখেছেন, ব্যাখাগ্রন্থ রচনা করেছেন। আজ অবধি গ্রন্থটি দ্বারা কত মানুষ উপকৃত হচ্ছে! আল্লাহ আমাদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।