কার্ফ্যু শিথিল হতেই ট্রাকে আগুন,অন্য রাজ্যেও প্রভাব মধ্যপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : কার্ফ্যু শিথিল হবার সাথে সাথে আবার হিংসাত্মক হয়ে উঠলো মন্দসৌরের কৃষকরা। গতকাল শুক্রবার সকালে ভূপাল-ইন্দোর জাতীয় সড়কে ফান্দার কাছে ৪টি ট্রাকে আগুন লাগিয়ে দেয় আশেপাশের গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসা কৃষকরা। বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। হিংসাত্মক কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে এদিনই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিথিল করা হয় কার্ফ্যু। আগের দিনই এ কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন জেলা শাসক ওমপ্রকাশ শ্রীবাস্তব। খোলা রয়েছে সব এটিএম, দোকানপাট, বাজার। দুধ, পেট্রোল, ডিজেল সরবরাহও চলছে। কারফিউ শিথিল হতেই শুক্রবার সকাল থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মন্দসৌর। প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার জন্য দোকানে দোকানে ভিড় করেছেন সাধারণ মানুষ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দরকারি কাজ মেটাতে তাড়াতাড়ি রাস্তায় নেমে পড়েছেন বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবারও বিকেলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল হয়েছিল। হিংসা বিধ্বস্ত এলাকায় বিক্ষোভ দমনকারী আধাসেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই মৃত কৃষকদের পরিবারপিছু এক কোটি টাকা এবং জখমদের ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্দসৌর, রতলাম এবং উজ্জয়নে এখনও বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। ফসলের ন্যায্য দাম এবং ঋণ মকুবের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন মন্দসৌরের কৃষকরা। মঙ্গলবার বিক্ষোভে পুলিসের গুলিতে ৫ কৃষকের মৃত্যু এবং ৮ জন জখম হওয়ার পর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এমনকি বৃহস্পতিবার রাহুল সেখানে যেতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হন। মধ্যপ্রদেশের কৃষক বিক্ষোভ অন্য রাজ্যেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। নিজেদের বিক্ষোভে অন্য রাজ্যের কৃষকদেরও পাশে পেলেন মন্দসৌরের আন্দোলনকারী কৃষকরা। বৃহস্পতিবারই দেশের সব থেকে বড় কৃষক সংগঠন ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন বা বিকেইউসহ মোট ৮টি কৃষক এবং শ্রমিক সংগঠন বিশেষ বৈঠক করে পাঞ্জাবের মোগায়। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, মন্দসৌরের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী সোমবার রাজ্য জুড়ে পুলিসের ডেপুটি কমিশনারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ হবে। কারণ, মন্দসৌরের কৃষকরা কোনও দেশবিরোধী কাজ করেননি। শুধুই ফসলের ন্যায্য দাম এবং ঋণ মকুবের দাবি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু পুলিস অন্যায়ভাবে গুলি চালিয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং স্বীকার করেন, ৫ কৃষকের মৃত্যু পুলিসের গুলিতেই হয়েছে। সে কথা উল্লেখ করে পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনের দাবি, অভিযুক্ত পুলিসকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও জমা দেবে সোমবার। এছাড়া রাজ্যে কৃষি মকুবের দাবিতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং-কেও স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। আগামী ২৩ তারিখ থেকে পাঞ্জাব বিধানসভায় শুরু হতে চলা রাজ্য বাজেট অধিবেশনেই ঋণ মকুব কার্যকরে দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। মোগার বৈঠকে আরও স্থির হয়েছে, সোমবারই দেশ জুড়ে কৃষি ঋণ মকুবেরও দাবি জানানো হবে। দাবি না মানলে আগামী ৭ জুলাই জলন্ধরে রাজ্য পর্যায়ের কৃষক সম্মেলন হবে। সেখানে দেশ জুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি সংগঠনের। একই দাবি করেছেন উত্তর প্রদেশের আখ এবং আলুচাষিসহ সব কৃষকরাও। তাদের দাবি, একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি এবং ফাঁকা আশ্বাস দেওয়া ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী কোনও জোরালো পদক্ষেপ করেননি এ বিষয়ে। লখনউয়ে বিকেইউ-র প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রবিবারের মধ্যে মন্দসৌরে পুলিসের গুলি চালনায় এফআইআর দায়ের হয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু না হলে তারা শহরে দুধ এবং সব্জি সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। বুধবারই প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি জানিয়ে লখনউয়ের জেলাশাসককে স্মারকলিপিও জমা দেন কৃষকরা। রাষ্ট্রীয় কিষাণ মঞ্চের সভাপতি বলেন, মন্দসৌরের পুনরাবৃত্তি উত্তরপ্রদেশে রুখতে হলে মুখ্যমন্ত্রীকে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের কৃষকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ