মাসুদা ভাট্টি, লন্ডন থেকে
ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা জেরেমি করবিন তার দলের পক্ষে ২৬১টি আসন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন. যদিও সরকার গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা ৩২৬টি। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে হেরে গিয়েও যে জনগণের রাজনীতিতে বিজয় লাভ করা যায় তা প্রমাণ করেছেন জেরেমি করবিন। তিনি প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হয়েও কার্যত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বই মূলত পালন করবেন বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, কারণ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের ওপর তার নিজের দলের নেতারাই ভরসা রাখতে পারছেন না। থেরেসা মের দুর্বল সরকারের পক্ষে সামনের দিনগুলো যে জেরেমি করবিন কঠিন করে তুলবেন তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।
প্রথমত লেবার দলের নেতৃত্ব লাভের যুদ্ধটি জেরেমি করবিনের জন্য সহজ ছিল না। নিজ দলের ভেতরকার বিরোধিতার সঙ্গে ব্রিটিশ মূলধারার গণমাধ্যম বিশেষ করে বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠান জেরেমি করবিনের তীব্র বিরোধিতা করেছে শুরু থেকেই। তার বিরুদ্ধে প্রথম ও প্রধান অভিযোগ জেরেমি করবিন ‘টনি ব্লেয়ার’ নন, অর্থাৎ তিনি একজন মধ্যবামপন্থি রাজনৈতিক নেতা। নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালেও তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল এটাই যে, জেরেমি করবিন বিজয়ী হলে ব্রিটেনে বামধারার সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যত ধরনের অপপ্রচার সম্ভব সবই করা হয়েছে জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে। কিন্তু একটি দারুণ নির্বাচনি মেনিফেস্টো এবং হাসিমুখে সকল অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার মাধ্যমে জেরেমি করবিন প্রমাণ করেছেন যে, তিনি আসলে দলের পক্ষে টনি ব্লেয়ারের চেয়েও বেশি ভোট আদায় করতে পারেন ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে। এছাড়া ব্রেক্সিটের ভিত্তিটাই যে মিথ্যা ছিল সে কথাও প্রমাণ করেছে জেরেমি করবিনের এই বিপুল গণসমর্থন। কিন্তু কেন তিনি এত ভোট পেয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারলেন না? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এই সেদিন ম্যানচেস্টার বিস্ফোরণের পর ব্রিটেনে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করার মাধ্যমে জেরেমি করবিন ব্রিটিশ এসটাবলিশমেন্টকে এই বার্তাই দিয়েছিলেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে এই পরস্পরবিরোধী নীতি বাদ দিতে হবে, ব্রিটিশ কট্টরপন্থি সমাজকে যা ভুল বার্তাই দিয়েছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।