জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : সর্বোচ্চ আদালত থেকে দেয়া জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধশত রায় উপেক্ষিত হয়ে আসছে। রায় ঘোষণার বছরের পর বছর এমনকি যুগ পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আদালত একের পর এক নির্দেশনা দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা পাত্তাই দিচ্ছেন না। এসব রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে প্রায় ১৬ বছর আগে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষকে একটি তদারকি সেল গঠন করতে অনুরোধ করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সেল গঠিত হয়নি।
জানা যায়, প্রায় অর্ধশত স্বপ্রণোদিত রায় বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৫ বছর আগে দেয়া রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর নির্দেশ, ১৩ বছর আগে দেয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডে নেয়ার ক্ষেত্রে ১৫ দফা নির্দেশনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ চিহ্নিত ও সংরক্ষণ, ভাষা জাদুঘর স্থাপন, ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়ন, ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানোর নিষেধাজ্ঞা, বিধি অনুসরণ করে আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো, সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করা, অডিও ও ভিডিও পাইরেসি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, বাজারে নোট ও গাইড বই বিক্রি বন্ধ করা এবং ফলমূলে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে সব ধরনের বন্দরে পরীক্ষাগার স্থাপন।
পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তারপরও অনেক সময় প্রশাসনের ফিল্ড লেভেলে যারা কাজ করেন, তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও অজ্ঞতা এবং প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যের কারণে রায় বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া যেসব ক্ষেত্রে মানুষের বিভিন্ন অধিকার জড়িত রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে অনেক সময় যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের মনের মতো রায় না হলে তারা প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। এতে রায় বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়।
গঠন হয়নি তদারকি সেল
জনস্বার্থে দেয়া আদালতের রায় ও আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষকে একটি তদারকি সেল করতে অনুরোধ করেছিলেন হাইকোর্ট। এই রায়ে ফুটপাত অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় ‘জনস্বার্থে’ বেশ কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়। ২০০১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ওই রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ‘ভারতে জনস্বার্থে দায়ের করা মামলার রায় তদারকি করতে একটি সেল খোলা হয়েছে। একই ধরনের মামলায় দেয়া আদেশ বাস্তবায়নে যথাযথ দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সেটি আমাদের দেশে হয়নি। ফুটপাত নিয়ে মূল আবেদনের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ঢাকা শহরে পথচারীদের ‘সহজ ও মুক্ত’ চলাচল নিশ্চিত করতে ‘স্পষ্ট ও কার্যকর’ আইন থাকলেও বিবাদীদের অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফুটপাতের ‘দরিদ্র’ হকারদের সরকার ক্রমান্বয়ে পুনর্বাসন করতে পারে বলেও রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ