সংকটে ব্রিটেন আশা-নিরাশার দোলাচলে মে-করবিন
লিহান লিমা : নিজের ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করলেও বাজিতে হেরে যান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় এখন জোট সরকার গঠনের দিকে মনোনিবেশ করছেন তিনি। তবে ছাড় দেয়ার পাত্র নন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনও।
যদিও যৌথ সরকার গঠনের জন্য ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি-ডিইউপির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে থেরেসা মে’র পার্টি। শনিবার রাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিট ও ডিইউপির পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার গঠন করতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আগামী সপ্তাহে শুরু হবে।’
মঙ্গলবার ডিইউপি নেতা আরলেন ফস্টারের ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে দেখা করার কথা আছে। ইতোমধ্যে ফস্টার জানিয়েছেন, ‘ব্রিটেনকে সুরক্ষিত রাখতে কনজারভেটিভদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন তারা।’ তবে এর মাঝেই উদারপন্থী কনজারভেটিভদের মধ্যে ডিইউপিদের সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালন বলেছেন, ‘ডিইউপিদের সঙ্গে কনজারভেটিভ দলের চুক্তিতে শুধুমাত্র অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বড় ইস্যুগুলো প্রয়োগ করা হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার গঠনের জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তির মানে এই নয় যে, আমরা তাদের সব বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করি।’
ধর্মীয় অধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে ডিইউপির মতাদর্শের মিল রয়েছে। তবে পেনশন কমানোর মতো মে সরকারের বেশ কয়েকটি নীতির বিরোধিতা করে ডিইউপি। সমলিঙ্গের বিয়ে ও গর্ভপাতসহ সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে এই দলটি কট্টরপন্থা অবলম্বন করে। এসব বিষয়ে রক্ষণশীলদের সঙ্গে এ দলের বিরোধ দেখা দিতে পারে। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে জোটে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সানডে মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৯ শতাংশ ভোটার মে’র পদত্যাগ চান। ৩৮ শতাংশ ভোটার তার পক্ষে। এছাড়া কনজারভেটিভ পার্টির দুই তৃতীয়াংশ ভোটার মে’র পদত্যাগ চায়।
টোরি দলের সাবেক চ্যান্সেলর জর্জ অসবোন বিবিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘থেরেসা মে মৃত নারী, যিনি হাঁটছেন। তবে এখন দেখা যাক তিনি কতক্ষণ এই মৃত্যুর সারিতে হাঁটতে পারেন।’ অন্যদিকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, মে’র অবস্থা নাজুক হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে প্রস্তুত।
ডাউনিং স্ট্রিট সূত্র জানায়, থেরেসা মে পদত্যাগ করলে বরিস জনসন ছাড়াও রাজকোষ বিষয়ক মন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড, প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালন, ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন।
এদিকে থেরেসা মে’র সরকার গঠনের উদ্যোগকে প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। বলেছেন , ‘কুইনস স্পিচের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি।’
১৯শে জুন বৃটিশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এ ভাষণের ওপর ভিত্তি করে মে যদি সরকার গঠনে অসমর্থ হন তাহলে করবিন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি-এসএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেট, গ্রিন পার্টি ও প্লেইড কেমরু’র সঙ্গে জোট সরকার গঠন করবেন।
করবিন বলেছেন, রাণির ভাষণের ওপর ভিত্তি করে পার্লামেন্টকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামনে নিয়ে আসবো। অবশ্যই আমরা দেশের সেবা করতে প্রস্তুত।
লেবার দলের ছায়া চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেল বলেছেন, দেশের স্বার্থে আমরা সরকার গঠন করতে চাই। সেটা হবে একটি মাইনরিটি সরকার। তাতে থাকবে রানীর দিক নির্দেশনা, বিকল্প বাজেট, ব্রেক্সিট সমঝোতার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা। রানীর ভাষণের ওপর ভিত্তি করে আমার দল অন্য দলকে তাদের সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানাবে।
তিনি আরো বলেন, এখন যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে এর জন্য লেবার পার্টি বা অন্য কোনো দল দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী শুধু কনজারভেটিভ পার্টি। যদি আমরা মাইনরিটি সরকার গঠন করতে পারি তাহলে সেটা হবে স্থিতিশীল সরকার। এ সরকার হবে পলিটি থেকে পলিসিতে সমর্থন দেয়ার শর্তে। তাতে আরেকটি নির্বাচন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
তবে দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়, রানীর ভাষণকে লেবাররা পাস করাতে পারবে বলে মনে হয় না। যদি সব লেবার এমপি, এসএনপি, গ্রিন পার্টি, লিবারেড ডেমোক্রেটিক দল ও প্লেইড কেমরু দলের এমপিরা এক হয়ে ভোট দেন তাহলে তাদের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১৪। কিন্তু হাউজ অব কমন্সে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৩২৬ আসনের দরকার। অন্যদিকে ডিইউপি দলের ১০ জন এমপির সমর্থন পেলে থেরেসা মে’র কনজারভেটিভদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২৮, যা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ২ বেশি। সূত্র : বিবিসি, ইন্ডিপেনডেন্ট, গার্ডিয়ান