মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা, তিন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাহাড় ধসে ৬ সেনাসদস্যসহ নিহত
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও মো. শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দুই সেনা কর্মকর্তা, চার সদস্যসহ ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে সেনা কর্মকর্তাসহ ৪৭ জন, বান্দরবানে ৬ জন এবং চট্টগ্রামে ২৭ জন মারা গেছেন। এখনো মাটির নিচে অনেক লাশ চাপা পড়ে আছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সোমবার মধ্য রাত ও গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে। রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে চার সেনা সদস্যের প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এছাড়াও আহত বাহিনীর পাঁচ সদস্যকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সেনা সদস্যসহ হতাহতের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রাঙামাটি যান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। গতকাল বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তিনি।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। জেলার ডিসি মানজুরুল মান্নান জানান, রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ২১ জন, কাপ্তাইয়ে ১৩ জন ও কাউখালীতে ১২ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রাঙামাটি সদর হাসপাতালে আহত ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন। টানা বর্ষণে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, রাঙামাটিতে সোমবার শুরু হওয়া বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। ধসে পড়া মাটির নিচে এখনো অনেকে চাপা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে হতাহত সেনা সদস্যরা মানিকছড়িতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর ধসে পড়া মাটি অপসারণে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এ সময় আকস্মিকভাবে পাশের একটি উঁচু পাহাড় ধসে পড়ে মাটি চাপা পড়েন তারা। পরে সেনা সদস্যদের উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত চার সেনা সদস্যরা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপোরাল আজিজ, সৈনিক শাহীন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক মুখপাত্র। এছাড়া আহত ৫ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। তারা হচ্ছেন সৈনিক আজমল, মামুন, ফিরোজ, মোজাম্মেল ও সেলিম। এদিকে, টানা বর্ষণে বান্দরবানের কালাঘাটা এলাকায় তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। এতে তিন শিশুসহ ৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। সোমবার রাত ৩টার দিকে প্রবল বর্ষণের সময় কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে, জেলেপাড়া ও লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বান্দরবানে কালাঘাটের কবরস্থানের পাশে পাহাড় ধসে রেবা ত্রিপুরা (১৮) নামের এক শিক্ষার্থী মাটি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। জেলেপাড়ায় মাটি চাপা পড়েন মা-মেয়ে। তারা হলেন কামরুননাহার ও সুফিয়া। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে দমকল বাহিনী। লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের তিনটি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। তারা হলো শুভ বড়ুয়া (৮),মিঠু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)।
বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের পূর্ব ধোপাছড়ি এলাকার সম্বুনিয়া পাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মংকাউ খেয়াং (৫৫) মেম্রাউ খেয়াং (১৩) ও ক্যসা খিয়াং (৭)। এ সময় চাইহ্লাউ (৩৫) ও সানু খেয়াং (১৮) নামে দুজন আহত হয়েছেন।
বান্দরবান সিভিল সার্জন বলেন, জেলার দুর্গম এলাকায় অনেক জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর গতকাল মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১ জন। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন