রোবায়েত ফেরদৌস
বাংলাদেশের সব নির্বাচনের পরই আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন সরকার আর তাদের বশংবদ নেতাকর্মীরা হেনো কোনো দুর্নীতি নেই যা তারা করেননি। প্রত্যেকটি দল ক্ষমতায় এসে তাদের দলের নেতাকর্মীদের সুবিধা দিয়েছে এবং সুবিধা নিয়েছে। এর ফলে তাদের আদর্শিক ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে, নীতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। পরিণামে, দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা মাফিক কাজ যেমন, জনমানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ, নীতি প্রণয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সংহতকরণÑ সব বিষয়ে অনীহা দেখায়। তখন একটা ভীতি তৈরি হয়; যার কুফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে দরকারি বিষয় সরকারের জবাবদিহিতা। সরকার সংসদের কাছে তার প্রত্যেকটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য। সেটি আজ বিলীন হয়ে গেছে; হাঁস আর সজারু মিলে এখন যে হাঁসজারুমার্কা ‘সরকারি-বিরোধী দল’ আছে সংসদে, তাদের যে কথা বলার সাহস নেই, প্রতিবাদের সাহস নেই, সেটা সবার জানা। এমন একটি তাবেদার বিরোধী দল দিয়ে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা যে সম্ভব নয় তা বর্তমান বিরোধী দলের লোকজনও জানে। এখন চলছে ‘তাবেদারিত্বের গণতন্ত্র’।
ছোট্ট একটা তথ্য দেই, গেল বছর ৭ জুন ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলা হয়েছে, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সংলাপ প্রয়োজন। বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত লক্ষ্যগুলো সম্ভবত ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাওয়াই হবে প্রথম অগ্রাধিকার। এই অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাংলাদেশের সব নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ প্রয়োজন এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সমর্থন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্বেগজনক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদল কি এই উদ্বেগ থেকে কোনো শিক্ষা নিচ্ছে না শিক্ষা নেবে? সংশয় একশ ভাগ।
রোবায়েত ফেরদৌস : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ৎড়নধবঃ.ভবৎফড়ঁং@মসধরষ.পড়স