পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে কক্সবাজারে ৩ লাখ মানুষ
ফরিদুল মোস্তফা খান ও সাইফুল ইসলাম : কক্সবাজারে প্রায় ৩ লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলেই কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব লোকজনকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। মাইকিং করে সতর্কমূলক প্রচারণা চালান। পরে আবার এসে আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে। গত দুদিনে রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও টেকনাফে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের হতাহতের ঘটনায় এ বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
কক্সবাজার বন বিভাগের সূত্র জানায়, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এরমধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর বনভূমি। এর মধ্যে পাহাড়ি জমিতেই বসবাস করছে ১৩ হাজার ৮২৬টি পরিবারের তিন লাখ মানুষ। জেলার মোট জনসংখ্যা ২৩ লাখ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাহাড় ধসে গত ১০ বছরে ৬ সেনা সদস্যসহ ৩ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরা মুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসের একই পরিবারের চারজনসহ ১৩ জন, ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ২৯ জন, ২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে ৫ জন, ২০১০ সালের ১৫ জুন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ জন সেনা সদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মারা যায় প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারায়। ২০১১-২০১৩ সালে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জন, ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ ৫ জন এবং ২০১৬ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন মারা যায়। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন ও পাহাড় কাটার কারণে মৃত্যু তালিকা লম্বা হলেও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় নানা কৌশলে চলছে পাহাড়কাটা। পাহাড় কেটে এসব এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে বসতি। কক্সবাজার শহরের আলির জাহাল, ঘোনার পাড়া, মোহাজের পাড়া, বৈদ্যঘোনা, বইল্যাপাড়া, জাদি পাহাড়, খাজা মঞ্জিল এলাকা, বাদশাঘোনা, ফাতেরঘোনা, ইসলামপুর, হালিমা পাড়া, লাইট হাউজ পাড়া, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এলাকা, আবু উকিলের ঘোনা, রহমানিয়া মাদ্রাসা এলাকা, পাহাড়তলী, বাঁচা মিয়ারঘোনা, হাশেমিয়া মাদ্রাসার পেছনে, সাহিত্যিকা পল্লী, বিডিআর ক্যাম্পের পেছনে, লারপাড়া, সদর উপজেলা কার্যালয়ের পেছনে, পাওয়ার হাউস, লিংকরোড, কলাতলী বাইপাস সড়কের দুই পাশের বিশাল পাহাড়ি এলাকা, হিমছড়িসহ জেলা শহরের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। এছাড়া কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ, রামু, সদর উপজেলা, চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীর বিভিন্ন স্থনে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ বসতি।