তামিম-মুশফিক-মাশরাফিতে বাংলাদেশের ২৬৪
এম এ রাশেদ : বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন আপ ভারতের সামনে ২৬৪ কি চ্যালেঞ্জিং স্কোর। গতকাল বার্মিংহামের এজবাস্টনে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকে ভর করে ভারতকে ২৬৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ।এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারত ১৪.৪ ওভারে এক উইকেটে ৮৭ রান সংগ্রহ করে। ওপেনার শিখর ধাওয়ান অধিনায়ক মাশরাফির বলে মোসাদ্দেককে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৪৬ রানে প্যাভিলিয়ন ধরেন। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনাল শুরু হওয়ার আগে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই- এমন সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল আগেই। বার্মিংহামের আবহাওয়া রিপোর্টও তেমন কথাই বলছিল। কিন্তু সমুদ্রের বধুখ্যাত ব্রিটেনের আবহাওয়ার ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। যে কোনো সময় রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আবার মেঘে ঢাকা আকাশও পরিবর্তন হয়ে চারদিকে আবার রোদ উঠতে পারে। তেমনই অবস্থা হয়েছে বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে। সময়মত টসও হয়েছে; কিন্তু এরপরই নামে বৃষ্টি। সম্ভাবনা ছিল মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার; কিন্তু হালকা বৃষ্টির পরই সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বৃষ্টির সময় পুরো মাথ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। ৫/৭ মিনিট বৃষ্টি হওয়ার পর থেমে গেলে ত্রিপল সরিয়ে নেয়া হয় এবং মাঠ খেলার উপযোগি হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
তবে হালকা বৃষ্টির কারণেই ম্যাচটি ১০ মিনিট দেরিতে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ সময় ৩.৩০ মিনিটের জায়গায় খেলা শুরু হয়েছিল ৩.৪০ মিনিটে। বৃষ্টির আগে টস করতে নেমে টস জিতেছিলেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনি বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান।
এরপর বাংলাদেশ তার ক্রিকেট ইতিহাসের স্বপ্নের সেমিফাইনালে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই বিরাট এক ধাক্কা খায়। দলের স্কোর বোর্ডে মাত্র ১ রান জমা হতেই সৌম্য সরকারের উইকেটটি হারিয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ভুবনেশ্বরের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। রানের খাতাই খুলতে পারেননি বাংলাদেশি এই ওপেনার।
এরপর ভালো খেলতে থাকা সাব্বির রহমানও ২১ বলে ১৯ রান করে প্যাভিলিয়ন ধরেন। বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৩১।
শুরুতে বাংলাদেশের দুই উইকেট পতনের পর ধাক্কা সামলিয়ে দুর্দান্ত ফর্মের তুঙ্গে থাকা তামিমের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দিনে এ দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১২৩ রানের জুটি গড়েন।
মাশরাফিরা ২৭ ওভার শেষে ২ উইকেটে যখন ১৫২ রান ছিল। ঠিক এমন ভাল পরিস্থিতিতে কত রানের আশা করতে পারে একটি দল? টাইগারদের স্কোর অনায়াসে তিন শত পেরোবে বলে মনে হচ্ছিল, কী করলে ৩৩০-৩৪০ হতে পারে, ধারাভাষ্য কক্ষে এ নিয়ে আলোচনাও হচ্ছিল।সেই বাংলাদেশ কিনা ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপকে দিতে পারল ২৬৫ রানের লক্ষ্য। এ রানটাও এল মাশরাফির এলোপাতাড়ি ব্যাট ঘোরানোর ছোঁয়ায়। না হলে, ৪৫তম ওভারেই তো রান তোলার শেষ ভরসাও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১১ রানের মধ্যে ফিরে গেছেন শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ। ২২৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আড়াই শ রান করতে পারবে কি না সে অপেক্ষায় ধুঁকে ধুঁকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২৫ বলে মাশরাফির অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংসের প্রতিটা রান তাই হয়ে গেল অনেক মহামূল্যবান!
অথচ এর আগে বাংলাদেশের স্কোর নিশ্চিতভাবে তিন শর দিকেই ছুটছিল। ২৮তম ওভারের শেষ বল থেকে ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বল পর্যন্ত ৪৫ বলের মধ্যে ২৫ রান করেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মাঝেই ফিরে গেছেন তামিম, সাকিব, মুশফিক। এই তিন স্তম্ভকে হারিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা শ্লথ হয়ে যায়। ২৮ ওভারের পর ওভারে ৬ বা এর বেশি রান নিতে পেরেছে মাত্র ৮ বার। অথচ এই সময়েই তো ঝড় তোলার কথা ছিল বাংলাদেশের! হাতে ছিল ৮ উইকেট।
ধোনির কেদার-জুয়াটা দারুণভাবে লেগে গেল বলেই পথ হারাল বাংলাদেশ। ১২৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটির পর বাংলাদেশ ছুটছিল দুরন্ত গতিতে। ৭০ রান করে তামিম ইকবাল ফেরার পরও আঁচটা সেভাবে গায়ে লাগেনি। উইকেটে তখন ছিলেন গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেওয়া সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
কিন্তু কাট করতে গিয়ে সাকিব ফিরলেন ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। পরের ওভারেই এর চেয়ে বাজে এক শট খেলে আউট হয়েছেন মুশফিক। কেদার যাদবের ফুল টসে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিক (৬১)। দুটো ঘটনাই ঘটল ৭ বলের ব্যবধানে।
এই ৭ বল সব গড়বড় করে দিল। বাংলাদেশ অবশ্য সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ করবে ২৮তম ওভারের শেষ বল থেকে ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বল পর্যন্ত ৪৫ বলের সময়টা নিয়ে। এ সময় ২৫ রানের মধ্যে ফিরে গেছেন তামিম, সাকিব, মুশফিক। এই তিন স্তম্ভকে হারিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা শ্লথ হয়ে যায়। এরপর মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেকও পরিস্থিতি সামলে নিতে পারেননি। ৭০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল ৭ উইকেটে ২২৯। যেটি ছিল ২ উইকেটে ১৫৯!
শেষ পর্যন্ত মাশরাফিরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৪ রান সংগ্রহ করেছে।