গরু নিয়ে তামাশা, মাংস নিয়ে লুট!
রবিউল আলম
১৫ মাস ধরে আন্দোলন করছি যাতে গুরুর মাংসের দাম কমে। কিন্তু গরু মাংসের দাম বেড়েই চলছে, জনগণের রোষানলে পড়ছে সারাদেশের মাংস ব্যবসায়ীরা। গাবতলি গরু হাটের ইজারাদারে লুট চলছে, বন্ধ করা যাচ্ছে না। ভাব দেখে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না, ডিএনসিসির কর্মকর্তারা এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। ছয়শত অভিযোগ করেও একটি নোটিস হচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো তদন্ত। সীমান্তে ঘুষের চাহিদা বেড়ে চলেছে, প্রতি গরুর সীমান্ত চার্জ ভারতীয় অংশে ৪০ হাজার টাকা, সরকারের এ বিষয়ে কোনো কর্ম পরিকল্পনা আছে কিনা তা জানা নেই। এদিকে ভারতীয় কর্র্তৃপক্ষ গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা দিতে প্রস্তুত। পরিবহনে গরু দেখলেই সে গাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, অবশ্য সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা ভারতকে বন্ধু মনে করে তাদের ইচ্ছাপূরণে গরু আমদানি বন্ধ করতে পারি, এতে আমাদের ৬০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে। ২ হাজার কোটি টাকা বৈধ পথে ভুটান, নেপাল, মায়ানমার থেকে পশু আমদানি করলে এবং আমাদের চরাঞ্চল, বনাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চলে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে পশু পালন করতে পারলে সারা পৃথিবীতে পশুর মাংস ও বর্জ্য রপ্তানি করে এ খাতে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ।
ভারতীয় পশু উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে, জাতীয় পশু হিসেবে গরুকে ঘোষণা দেওয়া হলে কোনো আপত্তি থাকার কথা না, আপত্তি হলো কোনো জিনিস তার নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করতে না পারলে, সে জিনিসের চাহিদা কমে যাবে, এর ফলে গরুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে না ভারতে। পশু পালন উন্নয়ন তখনই হবে, যখন পশু পালন লাভজনক হবে, শুধু পূজার জন্য গুটিকয়েক পশু পালন হতে পারে, দেশব্যাপী গরুর ব্যাপক উন্নয়ন হবে না। ভারতীয় পশু তাদের নিজস্ব বিষয়, আমাদের সমালোচনার প্রয়োজন নেই। আমরা চাই গরুর জন্য সীমান্ত হত্যা যাতে না হয়, আর ভারতে পশু পালনে ব্যাঘাত ঘটলে আমরা বসে থাকতে পারি না। ভারতের আশায় আমরা থাকতে পারি না। পশু পালন উন্নয়নের মাধ্যমে সারা পৃথিবী জয় করার সম্ভাবনা বাংলাদেশের আছে এবং সেই সক্ষমতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের মিষ্টি পানি, আবহাওয়া, কৃষক পৃথিবীর সেরা। পশু পালনের বড় বাধা গরু হাটের খাজনা দূর করতে হবে। একজন কৃষক ৪-৫ হাজার টাকা খাজনা দিয়ে পশু পালন করতে পারবে না ও উন্নয়নও হবে না। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিস্তারিত আলোচনার ব্যবস্থা করতে পারেন। ইতোমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সীমান্তে চলছে গরু নিয়ে রঙ তামাশা, দেশে চলছে মাংস নিয়ে লুট। কারা করছেন এসব? যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারাই। কে বন্ধ করবে এসব? উপায় না দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। লুটেরারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি থাকলে লুট করতে অসুবিধা হয়, গাবতলি গরু হাটের খাজনা দ্বিগুণ করা হয়েছে, ইজারা দ্বিগুণ হলে ২৬ কোটি টাকা হওয়ার কথা। ডিএনসিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে। তারপরও শর্ত মানছেন না ইজারাদার। দেশবাসী আমাকে মাফ করে দিবেন, ৩০০ টাকায় মাংস খাওয়ানোর ইচ্ছে স্বপ্ন হয়েই থাকল, পদত্যাগ ছাড়া আমার সামনে কোনো পথ ছিল না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শত চেষ্টা করেও দেশের জনগণকে একটু কম দামে মাংস খাওয়াতে পারছেন না গুটিকয়েক লুটেরাদের জন্য। দল করি বলেই সরকারের সুনাম রক্ষার আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম। কিন্তু এখন জীবন নিয়েই এখন আমি শঙ্কিত। মানুষের জন্য কাজ করলে তার পরিণতি কি এমনই হয়?
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান