সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম আইন ২০১৭ খসড়া চূড়ান্ত শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার) আইন ২০১৭ প্রাথমিক খসড়ার কাজ চূড়ান্ত। খুব শিগগিরই আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। দেশের আদালতগুলো থেকে মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে। আইনটি সম্পূর্ণ বাংলায় করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কথা চিন্তা করেই এই আইনটির বিধিবিধান সাজানো হয়েছে। এতে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা উপকৃত হবে বলে আইন কমিশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের আইনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর। এই আইনটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আইন কমিশন সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণ করবে। সর্বসাধারণ ইমেইলের মাধ্যমেও তাদের মতামত জানাতে পারবেন। ইমেইলের ঠিকানা দেয়া হয়েছে, মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা পৎড়@ষপ.মড়া.নফ, ধুরসভড়ুিঁষ@ুধযড়ড়.পড়স কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারী মামলায় ডাক্তার পুলিশসহ অনেককেই সাক্ষী হতে হয়। একজন ডাক্তার যেখানে থাকেন সেখানের ভিক্টিমের ময়নাতদন্ত করেন। এরপর তিনি অন্য জেলায় বদলি হয়ে যান। পুলিশের ক্ষেত্রেও তাই। এরা ভিডিও লিংকিং এর মাধ্যমে সাক্ষী দিলে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে। সময়ও বাঁচবে। ভবিষ্যতে আইনজীবীরাও যাতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারে সে সুযোগও রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী গুরুত্বপূর্ণ কোনো মামলার সাক্ষীরও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তার সাক্ষ্য নেয়া যাবে।
এই আইনটি প্রসঙ্গে সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম এই প্রতিবেদককে জানান, সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার) আইন ২০১৭’ অত্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আশা রাখছি। এ আইন মামলা জট নিরসনে এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আইন কমিশন ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনটি ঠিক রেখেই নতুন আইন করছে, যা কর মামলা জট কমাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সাক্ষী ও আসামিদের আদালতে না এনেই যাতে সাক্ষ্য নেয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নতুন এই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ আইন ১৮৭২ সালের আইনের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করবে। খসড়া আইনের মধ্যে রয়েছে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দূরে কারাগারগুলো থেকে দাগি আসামিদের বক্তব্য গ্রহণ, অনেক সাক্ষী বিভিন্ন জেলায় বা অন্য কোনো দেশে আছে তাদের এর মাধ্যমে জবানবন্দি গ্রহণ, ব্যক্তিগত হাজিরার পরিবর্তে ভারচুয়াল উপিস্থিতির মাধ্যমে সাক্ষ্য প্রদান এবং জেরা করার সুযোগ থাকবে। আর সবাই তা দেখতেও পারবে। ফলে আদালতে আসামি আনার যে নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি থাকে তা থাকবে না। সাক্ষীদের আসার ক্ষেত্রে যে জটিলতা সেটাও দূর হবে। এই আইনটির নাম দেয়া হয়েছে সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার) আইন ২০১৭।
যে কোনো আদালত বিশেষ ক্ষেত্রে মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ অথবা কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অডিও, ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে তার উপস্থিতি অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। শর্ত থাকে যে, উক্ত দরখাস্ত মামলার কোনো পক্ষ অথবা সাক্ষী বা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপস্থিতি অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের ১৫ দিন বা যুক্তিগ্রাহ্য সংক্ষিপ্ত সময়ের পূর্বে করতে হবে এবং দরখাস্তে অডিও-ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে উপস্থিতি অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের সুনিদিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের টেলিফোন নম্বর, ইমেইল আইডি ও তাদের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত তথ্যাদিসহ উল্লেখ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তার পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে পারবে। আরো শর্ত থাকে যে, হাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ কিংবা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ