দ্রুত আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর চালের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : হঠাৎ করে রমজানের আগে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। চালের মজুদ কমে যাওয়াকে এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে বিপদে ফেলতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার সরকারি হিসেবেই চালের মজুদ গত ৭ বছরের তুলনায় সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া আমদানিতে শুল্ক সুবিধা না কমালে বাইরে থেকে চাল এনেও দাম কমানো যাবে না।
এদিকে চালের দাম নিয়ে সরকারের মন্ত্রী এমপিদের মধ্যে অস্বস্তি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের কাছে এই চালের দাম নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে ভয় পাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তারা বিষয়টির সমাধান চান। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও দলের নীতি নির্ধারকরা এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চালের দাম সহনীয় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। তিনি খাদ্যমন্ত্রীকে দ্রুত সমাধানের পথ বের করতে বলেছেন। আমদানি দ্রুত করতে শুল্ক কমানোর প্রতিও ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি উদ্যোগে চাল আমদানি উৎসাহিত করতে চালের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত মজুদের পরিমাণ এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের এই সময়ে খাদ্যগুদামে চাল মজুদ ছিল পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। যা চলতি বছরের তুলনায় তিন লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি ছিল।
তবে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মজুদ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে। তিনি বলেন, মজুদ ঠিক আছে। সরকারের মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে হাওরের বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে জিটুজি পদ্ধতিতে সরকার ভিয়েতনাম থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল আদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশে এসে পৌঁছাবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডাকেট হুমায়ুন কবীর বলেন, চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারপরও সরকার বিষয়টি স্বীকার করছে না। তারা বলছে, মজুদ সন্তোষজনক। যদি সন্তোষজনকই হয়, তাহলে দাম কেন কমছে না?
জানা গেছে, সরকারের হিসাবে হাওরের বন্যায় মাত্র ছয় লাখ টন বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। এখন ছয় লাখ টন চাল আমদানি করলেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। তাই এই চাল আমদানির সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে দেড়লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তিন লাখ মেট্রিক টন ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি আমদানির চুক্তি হয়েছে।
এছাড়া সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি বোরো মৌসুমে ২২ হাজার ৪৬৩ চালকল মালিকের সঙ্গে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী আট লাখ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার কথা। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার টন সংগ্রহ করেছে।
এদিকে মজুদের জন্য গত বুধবার আরও আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতিটন চাল আমদানি করা হবে ৪৭০ মার্কিন ডলার মূল্যে। আমদনি করা এ চালের দাম পড়বে প্রতিকেজি এক ডলার ৮০ টাকা হিসাবে প্রতিকেজি চালের মূল্য হবে সাড়ে ৩৭ টাকা। তবে এ চাল কবে নাগাদ আসবে এই তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।