যানজট-জলাবদ্ধতা : প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ
ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। ঢাকার সঙ্গে যানজট ও জলাবদ্ধতা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। যানজট ও জলাবদ্ধতা নাম দুটি আমরা যারা ঢাকা শহরে বসবাস করি তাদের কাছে অতিপরিচিত। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ঢাকা শহর। এই শহরে জনদুর্ভোগ চোখে পড়ার মতো। যানজটের কারণে জনগণের সময় নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জনজীবনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। চাকরিজীবীরা সময়মতো অফিসে যেতে পারছেন না। ছাত্র-ছাত্রীরা সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না। যানজটের শিকার হন অসুস্থ মানুষও। অনেকসময়ই দেখা যায়, যানজটের কারণে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীকে যদি হাসপাতালেই সঠিক সময় না নেওয়া যায় তাহলে তার চিকিৎসা হবে কিভাবে? আমরা সময়মতো কোনো কাজ করতে পারছি না। প্রতিদিন আমাদের অনেক মূল্যবান সময় যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে।
তিন ও চার রাস্তার ক্রসিং পয়েন্টগুলো যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যানজটের কারণে ঢাকা শহরে গাড়ির গড় গতিবেগ মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ঢাকা শহরের অর্ধশতভাগ যানজটের জন্য এই ক্রসিং পয়েন্টগুলো দায়ী। যানজটের আরেকটি কারণ হলো অপরিকল্পিত বাসস্ট্যান্ড এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব। এর ফলে রাস্তার মাঝখানে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো হচ্ছে। প্রাইভেটকারের পাশাপাশি অত্যন্ত কম গতির রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও অটোরিকশা চলতে দেওয়াও যানজটের অন্যতম কারণ। এছাড়া বহুতল বিশিষ্ট বিপনি বিতান ও অফিসপাড়াগুলোতে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিংয়ের জন্যও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া গাড়ি পার্কিং বন্ধসহ রাস্তার মাঝখানে যাতে যত্রতত্র যাত্রী উঠাতে বা নামাতে না পারে সে জন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসন যদি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন তাহলে যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঢালাওভাবে সাজাতে হবে। রাস্তার প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। আমাদের সকলের সদিচ্ছাই পারে ঢাকাকে একটি পরিবেশবান্ধব এবং জনবান্ধব শহরে পরিণত করতে।
জলাবদ্ধতা ও যানজটের অন্যতম কারণ। ঢাকা শহরে অল্প বৃষ্টিপাতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে পুরান ঢাকা, শান্তিনগর, মালিবাগ, শুক্রাবাদ, তল্লাবাগসহ নগরীর প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ এবং চর্মরোগ। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এককথায় যানজট ও জলাবদ্ধতায় নাকাল রাজধানীবাসী। জলজটের কারণে অনেক সময় রাস্তায় সচল গাড়িও অচল হয়ে পড়ে। এতে ওই রাস্তা আর ব্যবহার উপযোগী থাকে না। রাস্তার বেহাল খবর শুনে ওই রাস্তায় আর কোনো গাড়ি নিয়ে চালকরা আসতে সাহস পায় না। একে তো যানজট আবার প্রয়োজনীয় গাড়ির অভাবে মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ দুর্ভোগ হয়ে থাকে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। শুধু ঢাকা কেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে যানজট জলজটের প্রকট সমস্যা দেখা দিচ্ছে আজকাল। চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে এ পর্যন্ত বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাক্সিক্ষত সুফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতার কারণে। রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক যখন খোঁড়াখুঁড়ির শিকারÑ সে মুহূর্তে ঘন বৃষ্টিপাতে ঢাকা মহানগরীকে আরও অচল হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভয়াবহ যানজট ও জলজটের কারণে পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।
আমাদের মতে রাজধানীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বেদখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ড্যানেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এ ঢাকা শহরে রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া পুরাতন ও ভাঙাচোরা গাড়ি যা ফিটনেসবিহীন অবস্থায় চলাচলের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগে জনজীবন আতঙ্কিত। এমনকি মানুষ আজ শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যানজট সমাধানে ট্রাফিক দায়িত্বপালনকারী সদস্যগণকে সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলকে আইন মেনে চলাসহ সচেতনতা বৃদ্ধি, মোবাইল টিম গঠন, জরিমানা, অনিয়মকে প্রশ্রয় না দেওয়া, ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করা, অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা ইত্যাদি প্যাকেজ কর্মসূচি গ্রহণ করে সমন্বিতভাবে আভিযানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: উপ-মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি (পিআরএল), আনসার-ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুর
সম্পাদনা: আশিক রহমান