সম্প্রতি গ্যাসের সম্পদমূল্য বাবদ ভোক্তাদের নিকট থেকে প্রতি হাজার ঘনফুটে ২৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ অর্থ থেকেও এসডি ভ্যাট নেওয়া হয় ৫৫ শতাংশ। এ বিষয়ে দুটি বিতর্ক রয়েছে : (ক) গ্যাসের সম্পদমূল্য হিসেবে সরকার পায় আইওসির ক্ষেত্রে প্রফিট গ্যাস এবং দেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে এসডি। তাহলে আবারও সম্পদ মূল্যহার হিসেবে বাড়তি ২৫ টাকা নেওয়া কী যৌক্তিক? (খ) সম্পদমূল্য ক্রয় বা বিক্রয় মুল্য বা সে মূল্যের অংশ নয়। তাই তা থেকে এসডি-ভ্যাট নেওয়া কী যৌক্তিক? নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়রনের স্বার্থেই এ দুটি বির্তক নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। ৬. আইওসির গ্যাস এসডি-ভ্যাট মুক্ত (১৯৯৩ সালের এসআরও নং ২২৭)। অথচ সে গ্যাসে এসডি ভ্যাটযুক্ত করে বিইআরসি ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করে। এমন অন্যায় অসঙ্গতির ন্যায়সঙ্গত আইনি সমাধান ব্যতীত নতুন ভ্যাট আইন গ্রহণযোগ্য হওয়া দুষ্কর।
৭. বিইআরসির গত ফেব্রুয়ারির আদেশে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২২.৭ শতাংশ। এই বর্ধিত মূল্যহারে
গৃহীত বাড়তি সমুদয় অর্থে ‘সাপোর্ট ফর শর্টফল ফান্ড’ শিরোনামের একটি তহবিল গঠিত হয়েছে। আদেশে এ তহবিলের অর্থ এসডি ভ্যাট মুক্ত রাখা হয়েছে। যা আইনানুগ নয়। আলোচ্য প্রেক্ষাপটে তা আইনানুগ হওয়া আবশ্যক। ৮. এনবিআরের বিরুদ্ধে ভোক্তার অভিযোগ: ক. আইন লংঘন করে ভোক্তা থেকে আদায় করা আইওসি গ্যাসের এসডি ভ্যাট গ্রহণ করা এবং খ. ভোক্তা পর্যায়ে আগাম কর্পোরেট কর আদায় করা। ৯. এক বছরের ব্যবধানে আর্থিক ঘাটতি বেড়েছে আরইবিতে আড়াইশ কোটি টাকা থেকে ৯ শত কোটি টাকারও বেশি। পিড়িবিতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। আবার এ বছরেই বিপিসির লাভ হবে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। মূল্যহার ও কর (শুল্ক,ভ্যাট…) নির্ধারণ ও বিন্যাসে সমতা, ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা নিশ্চিত না হওয়ায় এমন ভারসাম্যহীনতা। এ বিষয়টি বিবেচনা ছাড়া নতুন ভ্যাট আইন ফলপ্রসূ হওয়া কঠিন। ১০. সবার ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া কর্মসূচির ফলে ও জ্বালানি তেলের দরপতন বিদ্যুৎ উৎপাদনে যৌক্তিক সমন্বয় না হওয়ায় বিদ্যুৎ খাতে ঘাটতি বেড়েছে। সে ঘাটতি সমন্বয়ে সরকার কেবলমাত্র ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধিকেই কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে। আবার রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ভ্যাট থেকে অর্থ আহরণ বৃদ্ধি করতে চায়। তাই সে আহরণ সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিই কেবল নয়, ভ্যাটহারও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই ভ্যাটহার বৃদ্ধিতেই ভোক্তার আপত্তি। বিশেষ করে আপত্তি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং জ্বালানিজাত পণ্যঃ সার, সিমেন্ট, ইস্পাতের ক্ষেত্রে। ১১. গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি ও জ্বালানিজাত পণ্যের মতো সার্বজনিন ব্যবহৃত পণ্য বা সেবার দাম আমাদের মতো অনুন্নত দেশে (যেখানে অধিকাংশই স্বল্প আয়ের মানুষ) যত কম হয়, জনকল্যাণ ও অর্থনৈতিক কর্মকা- ততই বাড়ে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তাই ক্যাব মনে করে, অর্থনৈতিক কর্মকা- ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভোগ ব্যয় বাড়বে এবং কর ও ভ্যাট আহরণ বেশি বেশি বৃদ্ধি অব্যহত থাকবে। এমনিতেই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয়হার বাড়ছে। তাই সেই ব্যয়হার বৃদ্ধি সহনীয় রাখার জন্য এসব খাত থেকে রাজস্ব তথা কর, শুল্ক, ভ্যাট যতটা সম্ভব পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে তা অব্যাহতিও দিতে হবে। বৃদ্ধি তো নয়। (চলবে-০৩)
লেখক: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ