শুরু হলো নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতিমধ্যে রাজধানী ছাড়তে শুরু করছে মানুষ। শেষ সময়ের ভিড় ও ঝক্কি-ঝামেলা থেকে বাঁচতে লোকজন আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছে। রাজধানীর দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ স্টেশনগুলো অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড ও সদরঘাট লঞ্চঘাট ঘুরে এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে, এ বছর ২৭ জুন মঙ্গলবার ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য দিন ধরা হয়েছে। ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে ২৬ জুন সোমবার থেকে। অর্থাৎ ঈদের সরকারি ছুটি থাকবে সোম, মঙ্গল ও বুধবার। এর আগে শুক্র এবং শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে কার্যত ছুটি শুরু হবে ২৩ জুন শুক্রবার থেকে। সে হিসেবে ২২ জুন থেকে মূলত ঈদে বাড়ি ফেরা শুরু হবে মানুষের।
সায়েদাবাদের সোহাগ পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, দূরপাল্লার গাড়িগুলোতে পুরোদমে ভিড় শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ ভিড় শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এ চাপ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ী ছাড়া ছাত্র, বেসরকারি চাকরিজীবী, গৃহিণী ও শিশুরা শেষ সময়ের ভিড় এড়াতে এখন থেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। উত্তরার মৌসুমি আক্তার গাবতলীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, শেষ সময়ে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে। কেনাকাটা সব শেষ করে তাই একটু আগেই বাড়ি ফিরছি। আর সঙ্গে বাচ্চারা রয়েছে তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে উত্তরবঙ্গের টিকিট কিনতে আসা সোহেল রানা, মাসুম, মোতাহারসহ কয়েকজন যাত্রী বলেন, ঢাকায় এখনতো আর কোনো কাজ নেই। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছেন তারা। যত তাড়াতাড়ি যেতে পারবেন ততই আরামে যাওয়া যাবে।
ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ সদরঘাটে লঞ্চের জন্য অপেক্ষা অবস্থায় বলেন, ঈদের আগের প্রয়োজনীয় সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছি। ঢাকায় থেকে আর কাজ নেই। তাই পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ কাটানোর জন্য একটু আগেই বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছি।
এদিকে স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে এবারও নৌপথে পাড়ি দেবে অসংখ্য মানুষ। অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ। যাত্রা নির্বিঘেœ করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। যাত্রী চাপ সামাল দিতে গত ঈদুল ফিতরের ৬টি বিশেষ লঞ্চের জায়গায় এবার নামছে ১৪টি লঞ্চ। নজর রাখা হচ্ছে বিভিন্ন রুটের ফেরি সার্ভিসের নির্বিঘেœ চলাচলে। ফিটনেসবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ ঠেকাতে নানা তৎপরতার কথাও বলা হয়েছে। নদীপথে দুর্ঘটনা রোধে ঈদের ৫ দিন আগে থেকে ঈদের পর ৫ দিন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গায় সব ধরনের বালুবাহী জাহাজ ও ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নৌপথে ডাকাতি, টিকিট কালোবাজারি, বেপরোয়া লঞ্চ চালনা কিংবা নদীর মাঝপথে থামিয়ে যাত্রী তোলাসহ নানা অসঙ্গতির দিকে নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের মূলস্রোত নামবে পথে। দক্ষিণাঞ্চলের ৪১ নৌ-রুটেও চাপবে মানুষ। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও নৌযাত্রীদের নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলো। তাদের মতে, বর্ষাকালে দেশের নদীগুলো খরস্রোতা থাকায় এবার নৌপথে ঈদযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রমতে, এবার ঈদের ৫ দিন আগে থেকে ৫ দিন পর পর্যন্ত দিনেও বালুবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হলেও কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের কারণে এ সিদ্ধান্ত কাগজ-কলমেই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন লঞ্চ মালিকরা। যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘেœ করতে ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট টার্মিনাল) হকার ও অস্থায়ী দোকান বসানো বন্ধের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত কাগজ-কলমেই রয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ঠেকাতে এবার নৌ অধিদফতরের দুটি, বিআইডব্লিউটিএর একটি ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের একটিসহ মোট ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নৌযান না থাকায় সেটি হচ্ছে না বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।