বাংলা ভাষার আধিপত্যের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ভেঙে নতুন রাজ্যের দাবি
আনোয়ারুল করিম : বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেঙ্গে ‘গোর্খাল্যান্ড’ নামের নতুন রাজ্যের দাবি জোরালো হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সীমান্তের ওপাশে পশ্চিমবঙ্গের ‘পাহাড়’ হিসেবে খ্যাত হিমালয় কন্যা দার্জিলিং উত্তাল হয়ে উঠেছে এ দাবিতে। দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকাকে নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করছিল স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ। তবে এবার এই দাবি উত্তাল আন্দোলনে রূপ পেয়েছে একটি বিশেষ কারণে। বলা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য এলাকার মতো বৃহত্তর দার্জিলিংয়ের স্কুলগুলোর সিলেবাসে বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করার কারণেই সর্বশেষ দফা বিক্ষোভের শুরু। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দার্জিলিংয়ের নেপালী ভাষী গোর্খারা সেখানে নতুন করে এই দাবিতে আন্দোলন শুরু করার পর পরিস্থিতি দমনে সেখানে সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে। সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন নিহত এবং একশ’র বেশি আহত হয়েছে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তারা অভিযোগ করছে পুলিশ সেখানে গুলি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করছে। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রসঙ্গত, লড়াকু সৈনিক হিসেবে গোর্খাদের সুনাম আছে ব্রিটিশ, ভারতীয় এবং নেপালী সেনাবাহিনীতে। তাদের রণহুংকার ‘জয় মহাকালী, আয়ো গোর্খালি’-তে এখন প্রকম্পিত দার্জিলিং এর রাস্তাঘাট।
দার্জিলিং এর পাহাড়ে নতুন করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠার কারণ কী?- এর বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক নির্দেশ জারি করে দার্জিলিংসহ রাজ্যের সব স্কুলে বাংলা ভাষা শেখানো বাধ্যতামূলক করে। বলা হচ্ছে, সরকারের এই নির্দেশই দার্জিলিং-এ বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। দার্জিলিং-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ গোর্খাদের মাতৃভাষা হচ্ছে নেপালী। ওই এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং বলেছেন, ‘আমরা বাঙালি নই। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়। দার্জিলিংয়ের প্রায় সবাই কথা বলে নেপালী ভাষায়। কাজেই আমাদের কেন জোর করে স্কুলে বাংলা শেখানো হবে?’ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জ্যেষ্ঠ নেতা অমর সিং রাই বলেছেন, ‘আমরা কেবল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেই আলোচনায় বসতে চাই এবং সেখানে কেবল আলোচনা হতে পারে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি নিয়ে।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অবশ্য দুই পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
দার্জিলিংয়ে ১৯৮০ সালেও পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভয়ংকর বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। তখন সেখানে প্রায় বারোশ’ মানুষ নিহত হয়। দার্জিলিং-এ কিছুটা স্বায়ত্তশাসনের অঙ্গীকারের পর গোর্খারা তখন তাদের আন্দোলন থামিয়েছিল। কিন্তু সেসময়ের গোর্খা নেতা সুভাস ঘিসিং এর জায়গায় এখন গোর্খাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিমল গুরুং, যাকে অনেক কট্টরপন্থী বলে মনে করা হয়। তাকে আলোচনার টেবিলে আনা অতটা সহজ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।