সৌদি আরবের পক্ষে যেতে কূটনৈতিক চাপ মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্বে সিদ্ধান্তহীনতায় বাংলাদেশ
আনোয়ারুল করিম : কাতারের সাথে সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশারী দেশগুলোর দ্বন্দ্বে যতটা দূরে থাকা সম্ভব, সেরকম একটি অবস্থানেই থাকতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দূরে থাকতে চাইলেও এক্ষেত্রে সৌদি আরবের পক্ষে যেতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে। কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সৌদিদের সাথে কাতারের সম্পর্ক এবারই প্রথম এমন নয়, আগেও খারাপ হয়েছিল, কিন্তু এবারের ‘মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব’ এতটা কঠোর পদক্ষেপ অনেককেই হতবাক করে দিয়েছে। প্রাথমিক মধ্যস্থতার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে, ফলে সমস্যা দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনাও বাড়ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ বেশ সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এগুচ্ছে এবং এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও কথাই বলছে না। সূত্র বলছে, কূটনৈতিক বিবেচনা থেকে বাংলাদেশ যতটা সম্ভব এই সংকট থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেও তা সহজ হচ্ছে না। প্রথম দু’সপ্তাহ এটি নিয়ে বাংলাদেশ নিরব থাকলেও সৌদি আরবের পক্ষভুক্ত হতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে বলে সূত্রের খবর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের উচিত হবে একটি বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের সমর্থন সৌদি আরব পাবে কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে যদি মুসলিম দেশগুলোর ওপর চাপ আসে, তবে বাংলাদেশ হয়তো শেষ অবধি সৌদি আরবের সাথে যোগ দিতে বাধ্য হবে।
যদিও বাংলাদেশ আগেই বলেছিল যে তারা কোন সামরিক সংঘাতে জড়াবে না। তবে কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরব কোনও সামরিক পদক্ষেপে গেলে বাংলাদেশের সৌদি পক্ষ অবলম্বন করার একটি সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কাতার সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সাথেও বাংলাদেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। যার মূল প্রভাবটি পড়বে জনশক্তি রপ্তানির ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহের প্রায় ২৯ শতাংশ আসে সৌদি আরব থেকে। যদি উত্তেজনা বাড়ে এবং পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে যায়, তাহলে জনশক্তি রপ্তানিতে একটি ভাটা পড়বে এবং রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাবে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেছেন, “সৌদি আরবের পক্ষে অসম্ভব কিছুই না। তারা যেটা চায় সেটাতে যদি কেউ বাধা দেয় বা তাদের মতের সাথে যদি না মেলে, তবে উল্টো ব্যবস্থা নিতে তারা কখনোই পিছপা হয় না।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এস এম আলী আশরাফ গনমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, বাংলাদেশকে নিজেদের বাস্তবতা বিবেচনা করে নীতি গ্রহণ করতে হবে। এই দ্বন্দ্বে কোনও অবস্থান না নেয়াটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হবে বলে মনে করছেন তিনি। তার মতে, বাংলাদেশ বরং মধ্যস্থতার ভূমিকায় যেতে পারে।
এবিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ অবহিত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ কাজ করছেন সৌদি আরবে। আর কাতারে রয়েছেন প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশী।