সদকাতুল ফিতর : গরীবের অধিকার
মোস্তফা কামাল গাজী: রমজান বিদায় নিতে চললো। সবার মনে এখন বইছে ঈদের আমেজ, খুশির ফোয়ারা। যারা যথাযথভাবে রোজা পালন করেছেন, ঈদের খুশি কেবল তাদের জন্যেই। কেননা, ঈদ রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তোহফা স্বরূপ। সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে রোজা ও রমজানের অন্যান্য যাবতীয় আমল আদায় করতে পেরে বান্দার উচিৎ সিজদায়ে শোকর আদায় করা। এটা বান্দার ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। ঈদের দু’রাকাত নামাজ পড়াও তাঁর শোকর আদায়ের বহিঃপ্রকাশ। বান্দার উচিৎ, আল্লাহ যেনো রমজানের রোজা ও ঈদের নামাজ সন্তুষ্টিচিত্তে কবুল করে নেন, তাই বর্ধিত কিছু আমল করা। ঈদের খুশি ধনী- গরীব সবার জন্যে। তাই ধনীরা যেনো ঈদের খুশিতে বিভোর হয়ে আশপাশের গরীব আত্মীয়- স্বজনদের কথা ভুলে না যায়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়। তাদের উচিৎ গরীব আত্মীয়দেরও নিজেদের খুশিতে শামিল করা। আর এর অন্যমত মাধ্যম হলো, টাকা- পয়সা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা। সদকাতুল ফিতর এজন্যে ধনীদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে যেনো ঈদের খুশি থেকে গরীবরা বঞ্চিত না হয়। তারাও উপভোগ করতে পারে ঈদের অনাবিল আনন্দ। হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে, যেনো তা রমজানে কৃত গুনাহের কাফফারা এবং গরীবদের রিজিকের মাধ্যম হয়’। (আবু দাউদ: ১৬০৯) এজন্য ধনীদের উচিৎ যথাসময় সদকাতুল ফিতর আদায় করে দেয়া। বান্দার ওপর এটি আল্লাহ প্রদত্ত অবশ্য কর্তব্য বিধান। একাধিক হাদিসে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সদকাতুল ফিতর প্রত্যেক ধনী মুসলমানের ওপর ওয়াজিব। হোক সে গোলাম বা আজাদ, পুরুষ বা নারী, ছোট বা বড়।’ (বুখারি: ৫৪৮) এক রেওয়ায়তে আছে, রাসুলুল্লাহ সা. রমজানের শেষের দিকে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রোজার সদকা দাও।’ (আবু দাউদ: ১৬২২) একবার রাসুলুল্লাহ সা. মক্কার অলিগলিতে একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন এ ঘোষণা দেয়ার জন্যে, ‘সদকাতুল ফিতর পুরুষ- নারী, আজাদ- গোলাম, ছোট- বড় সবার ওপর আবশ্যক।’ (তিরমিজি: ৬৭৪) এটাই মহানবী স. এর মহানুভবতা। ঈদ উদযাপন কেবল ধনীরা করবে আর গরীবরা তা থেকে বঞ্চিত থাকবে, ইসলাম এটা কখনো কামনা করে না। তাই তো গরীবদের জন্য ইসলাম রেখেছে সদকাতুল ফিতরের বিধান। সদকা হলো সম্পদের ময়লা। এটি দান করার মাধ্যমে সম্পদের ও আত্মার পরিশুদ্ধি হয়। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সদকাতুল ফিতর ধনীদের জন্য আত্মার পরিশুদ্ধি।’ (আবু দাউদ:১৬১৯)
সমাজে যারা বাস করেন, সবাই মানুষ। ঈদ আসে সবার জন্যেই। সবাই চায় ঈদে ভালো খেতে, ভালো পরতে। ধনীরা যদি যথাযথভাবে জাকাত, সদকা আদায় করে ; আর গরীবদের প্রতি একটু হলেও লক্ষ্য রাখে, তাহলে তাদের ঈদ কাটবে আনন্দেই। সদকাতুল ফিতর আদায়ের মাধ্যমে ধনী- গরীবের মধ্যে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্বের অপূর্ব মেলবন্ধন। তাই আসুন, ধনী গরীবের ভেদাভেদ ভুলে আমরা একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। এতে সমাজে ফিরে আসবে অনাবিল শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের অটুট সেতুবন্ধন।