
বেদের আলোকে ‘বর্ণাশ্রম’
া বিনয় ভূষণ জয়ধর
প্রথমেই নামের বিষয়টা খেয়াল করা যাক। মূল এবং সঠিক নামটি হচ্ছে ‘বর্ণাশ্রম’।এখানে ‘বর্ণ’ শব্দটি এসেছে ‘ঠৎহ’ৎড়ড়ঃ থেকে যার অর্থ ‘ঞড় পযড়ড়ংব বা পছন্দ করা অর্থাৎ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারণ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সমাজে এখন একে জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়। ভট্ট্যাচার্য, চট্ট্যোপাধ্যায় নামের পাশে থাকলেই ব্রাহ্মন অথবা দাস,রায় থাকলেই শূদ্র এরকম হাস্যকর কিছু ধারণা প্রচলিত। আমরা বুঝি না কি করে মানসিকভাবে সুস্থ বলে পরিচিত এই আমরা এগুলো বিশ্বাস করি! চলুন দেখা যাক পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয় বেদ এ ব্যাপারে কি বলে।
‘একজন জ্ঞানের উচ্চ পথে (ব্রাহ্মণ), অপরজন বীরত্বের গৌরবে (ক্ষত্রিয়), একজন তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে (পেশাভিত্তিক), আরেকজন সেবার পরিশ্রমে (শূদ্র)। সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়, সকলের জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত। ঋগবেদ ১.১১৩.৬
একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেক রকম আর সে অনুসারে কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বেশ্য, কেউ শূদ্র। ক্সঋগবেদ ৯.১১২.১ ব্রাহ্মণ কে?
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত,অহিংস, সৎ, নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে ব্রাহ্মন।ক্সঋগবেদ ৭.১০৩.৮
ক্ষত্রিয় কে?
দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সৎকর্মেরদ্বারা শুদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন, অহিংস, ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক, ন্যায়পরায়ণ, বিদ্বেষমুক্ত, ধর্মযোদ্ধা, অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।ক্সঋগবেদ ১০.৬৬.৮
বৈশ্য কে?
দক্ষ ব্যবসায়ী, দানশীল, চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী।
অথর্ববেদ ৩.১৫.১
শূদ্র কে?
যে অদম্য, পরিশ্রমী, অক্লান্ত,জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা, লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।ক্সঋগবেদ ১০.৯৪.১১
এ হচ্ছে নির্ভেজাল যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থা। যেমনভাবে এখনকার
সময়ে ডিগ্রী প্রদান করা হয়,তখন যজ্ঞোপবীত দেয়া হতো বৈদিক নিয়ম অনুসারে। তাছাড়া, আচরণবিধির সঙ্গে অসম্মতি ঘটলে যজ্ঞোপবীত নিয়ে নেয়া হতো বর্ণগুলোর।
ডাক্তার এর ছেলে যেমন ডাক্তার হবেই এমন কোন কথা নেই। ডাক্তার এর ঘরে জন্ম নিলেই এম.বি.বি.এস এর সার্টিফিকেট যেমন পাওয়া যায় না, ঠিক তেমন ব্রাহ্মণ এর ঘরে জন্ম নিলেই ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না। বৈদিক বর্নাশ্রমও একই।
বৈদিক ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে এ ধরনের-
(ক) ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণতহন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রাহ্মন এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রাহ্মণকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য।
(খ) ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীরঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন।তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)
(গ) সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন। (ঘ) প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। (ঙ) মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন। (চ) রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন। (ছ) বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।
‘শূদ্র’ শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ। ‘কর্ম ও গুণভেদে কেউ ব্রাহ্মন, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য, কেউ শুদ্র। তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়। ইহারা ভাই ভাই। সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযতœ করে। ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি।’ক্সঋগবেদ
