নিরাপত্তার চাদরে থাকবে সারাদেশের ঈদগাহ ময়দান জায়নামাজ ছাড়া অন্যকিছু নেওয়া যাবে না : ডিজি র্যাব
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : মুসল্লিদের ঈদের জামাত নির্বিঘœ করতে সারাদেশের ঈদগাহগুলোয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, জাতীয় ঈদগাহে ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জায়নামাজ ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। জননিরাপত্তার স্বার্থে এমনকি পানির বোতলও নয়। গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহের প্রবেশদ্বারে অনেকগুলো ডিভাইস স্থাপন করা হবে। র্যাবের কমান্ডিং ও অপারেশন উইং নিয়ে জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন করা হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্য বড় ঈদগাহে র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এবার শোলাকিয়ায়ও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ। কয়েকশ বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়েছে। সাজসজ্জার কাজও শেষ। ঈদগাহ এলাকায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ-র্যাবের দুটি আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষও তৈরি করা হয়েছে। ময়দানের মূল ফটকের পাশেই বসানো হয়েছে ১২০টি অজুখানা। শুধু ঈদগাহ মাঠে বসানো হয়েছে পৌনে ১০০ সিসিটিভি ক্যামেরা।
বিজিবি সূত্র জানায়, শোলাকিয়ায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব-পুলিশ, এপিবিএন, আনসার-ভিডিপি ছাড়াও এবারই ঈদুল ফিতরের জামাতে প্রথমবারের মতো ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এরই মধ্যে শোলাকিয়ায় পৌঁছেছেন বিজিবি সদস্যরা। গত সপ্তাহ থেকেই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, এবারের জামাতের নিরাপত্তায় ৫০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ থাকবে। পুরো শোলাকিয়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে। আগের রাত থেকে মেটাল ডিটেকটর দিয়ে ঈদগাহ মাঠ তল্লাশি করা হবে। মাঠের ২৮টি গেটে মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি করে মুসল্লিদের প্রবেশ করানো হবে।
ঈদ জামাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, এবার শোলাকিয়া ও কেন্দ্রীয় ঈদ জামাতসহ সারাদেশের বড় বড় ঈদগাহে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। দেশবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে নিরাপদেই ঈদ উদযাপন করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে কোনোরকম নাশকতা চালানোর সাহস দুর্বৃত্তরা পাবে না বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গতবছর রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার রেশ না কাটতেই ৭ জুলাই দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশ পথে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে নিহত হন মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই কনস্টেবলসহ ৪ জন। ওই ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হন।
জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার ৯০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। ৮৫ হাজার পুরুষ ও পাঁচ হাজার নারীর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহের জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। ২ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটের জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ