সংগীতজ্ঞ সুধীন দাসের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শোক
কমল সরকার : বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ, স্বরলিপিকার ও নজরুল গবেষক সুধীন দাসের অন্তেষ্টিক্রিয়া গতকাল বুধবার রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ নজরুল ইন্সটিটিউটে নেওয়া হয় এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে ১১টায় রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
সুধীন দাশ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিছু দিন ধরে তার হজমেও সমস্যা হচ্ছিল। গত মঙ্গলবার সকালে তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়ার পর লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
প্রখ্যাত এ সংগীতজ্ঞের মৃত্যুতে পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এক বার্তায় গভীর শোক প্রকাশ করে সুধীন দাসের আত্মার শান্তি কামনা করেন। পৃথক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সঙ্গীত জগতে সুধীন দাসের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে বিশিষ্ট এই শিল্পীর রুহের শান্তি কামনা করছি। এ সময় তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সুধীন দাসের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মৃত্যুকালে হাসপাতালে সুধীন দাসের পাশে ছিলেন তারই ছাত্রী বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। তিনি বলেন, বাংলা গানে বিশেষত স্বরলিপিকার এবং নজরুল গবেষক হিসেবে তার যে অবদান তা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। ওস্তাদজির আশীর্বাদ পেয়েছি, এ যে আমার জন্য পরম পাওয়া। তার শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সবসময় গর্বিত। তার প্রয়াণে একজন সত্যিকারের সঙ্গীতপ্রেমী গুণীজন হারাল বাংলাদেশ, বাংলা গানপ্রেমী শ্রোতারা।
সুধীন দাসের একমাত্র ছেলে নিলয় ছিলেন একজন প্রখ্যাত গিটারিস্ট। কয়েক বছর আগে তিনি পরলোকগমন করেন। তারই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও সংগীত গবেষক সুধীন দাস তার জীবনের পুরোটা সময় দিয়ে গেছেন গানের পেছনে। সুর করেছেন, সংগীত পরিচালনা করেছেন সংগীত নিয়ে গবেষণার কাজটিও করে গেছেন তিনি। লালনগীতির ক্ষেত্রেও তার অবদান সর্বজন স্বীকৃত। সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি তার বহুমুখী কর্ম দিয়ে এদেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন।
১৯৩০ সালের কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড়ের বাগিচাগাঁওয়ে জন্মেছিলেন সুধীন দাস। তিন বোন আর ছয় ভাইয়ের পর মায়ের কোলজুড়ে এসেছিলেন তিনি। বাবা নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমপ্রভা দাশের আদর-স্নেহের বড় একটা অংশই তার নামে বরাদ্দ ছিল। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজে। কলেজের চৌহদ্দি পেরোলে আসে বিএ পরীক্ষার ডাক। তবে ততদিনে পড়াশোনার চেয়ে অন্য বিষয়ে বেশি মন দিয়েছেন তিনি। এ সময় দাবা খেলাটাও প্রায় নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। তাই পরীক্ষাটা আর দেয়া হয়নি শেষ পর্যন্ত। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী