বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্র্থনীতি
জাফর আহমদ : যোগাযোগ গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারা বদলে দিয়েছে। উৎপাদিত ফসল সকালে ক্ষেত থেকে তুলে ঘণ্টার মধ্যে বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। আবার একই সময়ের দূরত্বে নিত্যপণ্য নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছে। উৎপাদিত পণ্যের দাম কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে পণ্য ক্ষেত থেকে তুলছে না। ফলে ফসল বা শিল্প পণ্য উৎপাদন করে তা অর্থনীতির সুষম কাজে লাগছে। কুষ্টিয়া ও নাটোরের বিভিন্ন পল্লী অঞ্চল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
কুষ্টিয়ার ফিলিপনগরে কৃষক আশরাফুল ইসলাম তিনদিন আগে জানতে পেরেছিলেন পরের দিন সবজি ঢাকায় যাবে না, সবজির দাম পাওয়া যাবে না। তাই ক্ষেত থেকে সবজি তুলেনি। পরের দিন দাম পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেত থেকে সবজি তুলেছে। দামও পেয়েছেন। একই গল্প রাজশাহী জেলার বাঘমারার কৃষক আতিয়ারের জীবনের। আতিয়ার পানের বরজ থেকে পান তুলে ব্যাটারি চালিত ভ্যানে আধা ঘণ্টার মধ্যে পানের বাজারে পৌঁছে গেছেন। পান বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফিরেও এসেছেন। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ও সড়ক যোগাযোগ ভূমিকা রেখেছে। যা কয়েক বছর আগেও সম্ভব ছিল না। মোবাইল ফোনের প্রবর্তন, সহজ লভ্যতা ও ব্যবহার এবং সড়ক যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে সরকারের প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি করার কারণে ফসলও বেশি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, এর মাধ্যমে একদিকে সময় বাচছে, দাম নিয়ে হতাশা দূর হয়েছে। তার বিশ্বাস এতে শরীর-মনও ভালো থাকে। উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ‘আমাদের অর্থনীতি’ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষিসম্প্রারণ কর্মীরা কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এতে কৃষকদের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর, তুলনামূলক ভালো বীজ-সার প্রয়োগের পরামর্শ, ভালো জাতের ফসল চাষ, আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায় এমন ফসল ও পরিবেশ সম্মতভাবে চাষ করা যায় এমন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তবে দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় হতাশাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মনে করছে কৃষকরা।
উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদের কৃষি বহির্ভূত আয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সম্প্রতি এক সেমিনারে তিনি বলেন, উৎপাদন করে কম দামে ফসল বিক্রি করতে কৃষকরা আগের মতো আর ব্যস্ত হয়ে পড়ে না। নগদ টাকার প্রয়োজনে পরিবারের প্রবাসী বা চাকরিজীবী পরিজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রয়োজন মেটায়। তারপর যখন বেশি দাম পায় তখন ফসল বিক্রি করে। এতে টেকসই গ্রামীণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন