প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশকে নির্দেশ বললেন অর্থমন্ত্রী আবগারি শুল্ক কমছে, দুই বছরের জন্য স্থগিত থাকছে ভ্যাট আইন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : প্রস্তাবিত বাজেট থেকে আবগারি শুল্ক কমানো ও ভ্যাট আইন আগামী ২ বছরের জন্য স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এই সুপারিশ করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী অর্থবিলের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ মেনে নেন এবং তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টি সুপারিশ নয়, নির্দেশ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বাজেটের আরো অন্যান্য দিক নিয়ে অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। আজ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এই পরামর্শ অনুযায়ীই বাজেট পাস হবে।
গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে যেসব সুপারিশ করেছেন, আসলে সেটি সুপারিশ নয়, সেটি নির্দেশনা। তিনি বলেন, তার এই নির্দেশনা অবশ্যই জনগণের জন্য ভালো হবে।
ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি ২০ হাজার টাকার বেশি রাখেন, তাকে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হতো। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কথা মানুষ উল্টো বুঝেছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই ২০ হাজার টাকাকে ১ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই বুঝেছে উল্টো। আসলে তিনি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত তিনি শুল্কমুক্ত করে দিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী ১ লাখ টাকার বেশি থেকে শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী ১ লাখের বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এটাকে সংশোধন করে দুটি স্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব আবগারি শুল্কমুক্ত রাখা এবং ১ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং ৫ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
ভ্যাট আইনের বিষয়ে ব্যবসায়ী ও জনগণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আইনটা খুব ভালো। কিন্তু এটা নিয়ে নানা কথা হয়েছে। আমি মনে করি, মূল্য সংযোজন কর নিয়ে যেহেতু নানা ধরনের কথা হচ্ছে, সেজন্য আগের পর্যায়ে যেরকম ছিল, সেভাবেই থাকবে দুই বছরের জন্য।
জনগণকে কর ফাঁকির প্রবণতা থেকেও বের হয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কর ফাঁকি দিতে গেলে নিজেরাই ফাঁকিতে পড়বেন।’
উল্লেখ্য, গত ১ জুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব বিষয় অর্থমন্ত্রী তুলে ধরেছেন এর মধ্যে লাখ টাকার ওপরে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্য ছাড়া সব সেবা ও পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। সংসদের বাইরে বিএনপি এবং সংসদের ভেতরে জাতীয় পার্টি তো বটেই, খোদ সরকারি দলের বেশ কয়েকজন সদস্যও এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার কথা।
বরাবর বাজেট আলোচনার শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী কিছু সুপারিশ করেন এবং এরপর অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনেন। আর অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের দিন এই বাজেট পাস হয় সংসদে। গতকাল বাজেট পাসের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘ বক্তব্য শেষে অর্থমন্ত্রীকে মোট তিনটি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীকে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর কথা বলেন। হাওরে ফসলহানির প্রেক্ষিতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সরকার চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ কর এবং তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের বাকি সময়ে এই হার বজায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। নানা ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সেখানে বন্যার কারণে চালের ক্ষতি হয়েছে, নইলে আমদানি করতে হতো না। যদি আগামীতেও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়, তাহলে আগাম ব্যবস্থা করে যাব।
২০১২ সালে পাস হওয়া ভ্যাট আইন অনুযায়ী এবারের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী নিত্যপণ্য ও চিকিৎসা ছাড়া বাকি পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি দুই বছর পিছিয়ে গিয়ে আগের হারেই ভ্যাট আদায়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। সেভাবেই করে দেবেন, আগামী দুই বছরের জন্য। বর্তমান পদ্ধতিতেই ভ্যাট আদায় বজায় রাখবেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী