রাশিদ রিয়াজ : ফোর্থ জেনারেশনের মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত সংস্করণের। গত এপ্রিলে মিগ-৩৫ বাংলাদেশে বিক্রির প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। এখন একই ধরনের যুদ্ধবিমান ভারতের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। ২০০৭ সালে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বিমান প্রদর্শনীতে মিগ-৩৫ প্রদর্শন করা হয়। এরপর এ যুদ্ধবিমানটির আরো সংস্কার করা হয়েছে।
এক প্রতিবেদন অনুসারে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলির গত মস্কো সফরের সময় উভয় দেশ মিগ-৩৫ ক্রয় বিক্রয় নিয়ে আলোচনা করে। এধরনের যুদ্ধবিমানে উন্নত উড্ডয়ন ক্ষমতা ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ছাড়াও এনইএসএ রাডার ব্যবস্থা সংযুক্ত করা হয়েছে। ভূমি থেকে কোনো নির্দেশনা ছাড়াই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে অতি দক্ষতার সঙ্গে বহুমুখী ভূমিকায় যুদ্ধবিমানটি সক্রিয় থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কাছেই রাশিয়া প্রথম এধরনের যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দেয়। হাসিনা-মোদির মধ্যে গত ৭ এপ্রিল বৈঠকে বাংলাদেশকে ভারতের ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা সহায়তার সিদ্ধান্তের পর রাশিয়া বাংলাদেশের কাছে মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান দেশটি প্রতিরক্ষা উন্নত করতে ভারতের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তবে বিরোধীদল বিএনপি রাশিয়ার কাছ থেকে পুরাতন যুদ্ধবিমান ও ভারতের কাছ থেকে অপ্রচলিত অস্ত্র কেনার সমালোচনা করে। এমনকি প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তার প্রস্তাবকে বিএনপি সন্দেহজনক হিসেবেও উল্লেখ করে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহায়তায় গোপন চুক্তির সমালোচনা করা হয় এবং এ চুক্তি প্রকাশ করার দাবি তোলা হয়। তবে মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে বিএনপির অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারতে যখন মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তখন মিসর ইতিমধ্যে আড়াই বিলিয়ন ডলার দিয়ে ৪৬টি মিগ-৩৫ বিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছে। একটি মিগ-৩৫ বিমানের মূল্য পড়েছে ৪৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত মিগ-৩৫ বিমান ক্রয়ের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। কাজাকাস্তানও এ বিমান ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে। রাশিয়ার মিগ যুদ্ধবিমান সেকেলে এমন অভিযোগ ধোপে টেকার মতো নয়। কারণ গত বছর নিঝনি নভগোরদ ৪৫ হাজার মিগ যুদ্ধবিমান উৎপাদনের পর ১১ হাজার বিমান বিভিন্ন দেশে বিক্রি করেছে। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার অস্ত্র ক্রয় চুক্তি রয়েছে সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি ছাড়াও চীন ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। চীন বাংলাদেশে সিংহভাগ অস্ত্র বিক্রেতা। একই সঙ্গে ভারত ২৫ বছর মেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তির জন্যে বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে রাজি হননি। বাংলাদেশ উভয় দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং একটি ঝুড়িতে সবগুলো ডিম রাখতে চায় না। তবে বাংলাদেশ প্রথম ধাপে ৮টি মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের বিষয়টি বিবেচনা করছে। ঢাকা ট্রিবিউন থেকে অনুবাদ।