আবারও নারীকে কটাক্ষ ট্রাম্পের
ইমরুল শাহেদ : ডোনাল্ড ট্রাম্প আদৌ স্বাভাবিক তো? মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে কুরুচিকর মন্তব্য শুনে এবার ধন্দে রিপাবলিকানারাই। টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে মসকরা করায়, বৃহস্পতিবার সঞ্চালিকা মিকা ব্রিজেজিনস্কর উদ্দেশে টুইটারে কুরুচিকর মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রথমে এমএসএনবিসির ‘মর্নিং জো’ অনুষ্ঠানটিকে তুলোধোনা করেন তিনি। ‘মর্নিং জো-র তো টিআরপিই নেই। আমি তো কবেই দেখা ছেড়ে দিয়েছি। তবে শুনলাম ওরা নাকি আমার নামে কুৎসা করছে!’ এর কয়েক মিনিট পরই পুনরায় একটি টুইট করেন ট্রাম্প। তাতে মূলত মিকাকে উদ্দেশ করেই সেটা করেছেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলাকালীন তিনদিন ফ্লোরিডার রিসর্টে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল মানসিকভাবে অসুস্থ জো এবং মূর্খ মিকা। আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিল। মুখের চামড়া টান-টান করতে সেই সময় শল্য চিকিৎসা করিয়েছিল মিকা। ভয়ঙ্করভাবে রক্ত ঝরছিল। আমি তো তৎক্ষণাৎ না বলে দিয়েছিলাম।’
সেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্ব থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো। যার মধ্যে অন্যতম হল এনবিসির খবরের চ্যানেল এমএসএনবিসি। সেখানে ‘মর্নিং জো’ নামের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মিকা ব্রিজেজিনস্কি এবং জো স্কারবরো। ‘টাইম’ পত্রিকার প্রচ্ছদে ট্রাম্পের ছবি ছাপা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মস্করা করছিলেন তারা। তাতে মিকা ব্রিজেজিনস্কি বলেন, ‘নিজেকে নিয়ে বড়াই করতে পত্রিকার প্রচ্ছদে বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জাল ছবি ছাপিয়েছেন ট্রাম্প। ভুয়ো তথ্য দিয়েছেন। তবে শুধু পত্রিকাই কেন, প্রতিদিনই তো মিথ্যে বলে চলেছেন উনি। দেশটাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।’ শরীরের তুলনায় ছোট হাত নিয়ে প্রায়শই হাসির খোরাক হতে হয় ট্রাম্পকে। সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন মিকা। বলেন, ঝাঁ চকচকে ছবি ছাপিয়ে আদতে নিজের হাত লুকনোর চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প।
মিকা ব্রিজেজিনস্কি একজন দক্ষ ও প্রত্যুৎপন্নমতি মার্কিন টিভি সঞ্চালক এবং লেখিকা হিসেবেও খ্যাতিমান। তিনি এমএসএনবিসির সকালের অনুষ্ঠান মর্নিং জো-এর সঞ্চালক সাবেক রিপাবলিকান প্রতিনিধি জো স্কারবোরোর সহযোগী সঞ্চালক। এর আগে তিনি সিবিএস নিউজ করেসপনডেন্স ছিলেন এবং নাইন ইলেভেন ঘটনার সময় তিনি সরেজমিন রিপোর্ট করেছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি সিবিএস ছেড়ে এমএসএনবিসিতে যোগ দেন। এখানে তিনি প্রথমে একজন অনিয়মিত সঞ্চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি মর্নিং জো-তে সহযোগী সঞ্চালক হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি জো স্কারবোরোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বামী জেমস হোপারের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ২০১৬ সালে। এছাড়া তিনি তিনটি বই লিখেছেন। এর মধ্যে দুটি তার কর্মজীবন নিয়ে এবং একটি খাদ্যে আসক্তি নিয়ে।
উল্লেখ্য, মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই ধরনের সমালোচনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া দেখে তাজ্জব সকলে। রিপাবলিকান সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম টুইটারে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্টের মুখে এমন মন্তব্য শোভা পায় না। মার্কিন রাজনীতি কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে, আপনার টুইটই তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। এই আমেরিকা শ্রেষ্ঠ হতে পারে না।’ রিপাবলিকান সিনেটর বেন স্যাসে লেখেন, ‘দয়া করে বন্ধ করুন। এটা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না!’ রিপাবলিকান হাউস স্পিকার পল রায়ান বলেন, ‘এটা কখনওই উপযুক্ত মন্তব্য হতে পারে না। শালীনতা বজায় রেখে মুখ খোলা উচিত। সবর্দা সেই চেষ্টাই করে চলেছি আমরা। যাতে তর্ক-বিতর্ক চরমে উঠলেও ভদ্রতা বজায় থাকে। কিন্তু এভাবে চললে তো মুশকিল!’ এমএসএনবিসি-র তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘আমেরিকার জন্য অত্যন্ত দুঃখের দিন। কারণ এই প্রেসিডেন্ট নিজের কাজটুকু ছাড়া বাকি সমস্ত কিছুই করেন। সে অন্যকে হেনস্থা করা হোক বা মিথ্যে কথা বলা অথবা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাউকে আক্রমণ করা, এভাবেই দিন কাটাতে ভালবাসেন তিনি।’ সূত্র : বিবিসি, আজকাল, উইকিপিডিয়া। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী