সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনে চীনকে ভারতের হুঁশিয়ারি, আলোচনার ডাক বেইজিংয়ের
মাছুম বিল্লাহ : ভারত-ভূটান-চীন সীমান্তে ডোংলাং এলাকা দখল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চীন ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছে। ভারতও পাল্টা অভিযোগ করেছে এবং চীন ভারতের দুটি বাঙ্কার উড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এরপর দুই দেশের মধ্যে দু’বার ফ্ল্যাগ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কাটছে না ২৩ দিনের অচলাবস্থা। সিকিম-তিব্বত-ভুটান সীমান্তে ডোকা লা এলাকায় সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে। ভারত তার সীমান্তে চার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। চীনও পাল্টা সমসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে।
চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি সীমান্ত থেকে ভারতকে অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহার করে নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে অনুরোধ করেছ। ভারত সেনা না সরানো পর্যন্ত ডোকা লা এবং ডোকালাম মালভূমি নিয়ে ফ্ল্যাগ মিটিং করতেও নারাজ চীন। ভারত অবশ্য সেই দাবি মানতে নারাজ। উল্টে প্রয়োজনে সিকিম সীমান্তে আরও সেনা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গিয়েছে। গ্যাংটকের ১৭ নম্বর ডিভিশনের সব অফিসার, সেনা সদস্যদের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে সৈন্যদের প্রস্তুতি দেখতে গতকাল সিকিম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। এর আগে তিনি ভারতীয় সেনার ৩৩ নম্বর সুকনায় কোরের সদর দফতরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং সীমান্তের চীনের সেনাদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
অন্যদিকে সীমান্তে উত্তেজনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারতকে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। একইসঙ্গে চীন বলেছে, ভারত যেন কোনও পরিস্থিতিতেই ডোংলাং নিয়ে মাথা না ঘামায়। কারণ ওটা চীনের অংশ।
এদিকে শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি চীনকে হুঁসিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ১৯৬২-র ভারতের সঙ্গে আজকের ভারতকে গুলিয়ে ফেলবেন না। শুক্রবার নয়া দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বললেন, চীন অন্য দেশের এলাকায় ঢুকে তা দখল করার চেষ্টা করছিল। ভারত এমনটা হতে দেবে না। ১৯৬২-র ভারত আর ২০১৭-র ভারতের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছেন,‘ভারত আড়াইটা ফ্রন্টে (চীন, পাকিস্তান এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) যুদ্ধ করতে তৈরি’। তার এই মন্তব্যকে ‘চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়ে বৃহস্পতিবার পিপলস লিবারেশন আর্মি’র মুখপাত্র উ ইয়ান জানিয়েছে বলেছেন, ‘ইতিহাস (১৯৬২-র ভারত-চিন যুদ্ধ) থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের উচিত এই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বন্ধ করা।’
গত বৃহস্পতিবার চীনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিক্রিয়ার পর শুক্রবার এ কথা বলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার জানানো হয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটানের অংশ ডোকলাম এলাকায় চীনা সেনা রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল। বিষয়টি ভারতের নিরাপত্তা বিঘিœত করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক বার্তায় বলা হয়েছে, গত ১৬ জুন হঠাৎ ভুটানের ডোকলামে চলে আসে চীনের সেনা। তাদের বাধা দেয় রয়্যাল ভুটান আর্মি। এরপরেই ২৬ জুন সিকিমের লাগোয়া সীমান্ত পেরিয়ে চীনা সেনারা ঢুকে পড়ে ।
বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়িয়েছে নয়াদিল্লি-বেইজিং। পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক গরম হয়ে উঠেছে। ডোকলামে চীনা সেনার ঢুকে পড়ায় বেইজিংকে কড়া বার্তা দিয়েছে থিম্পু। পাল্টা ভুটানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন।