বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য নিয়ে মুখোমুখী
মাছুম বিল্লাহ : সিকিম-ভুটান-তিব্বত সীমান্ত এলাকার ডোংলং-এ গত ২৪ দিনের অচলাবস্থার পর এখন মুখোমুখি ভারত ও চীন। দুই দেশই ওই সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছে। মূলত সেখানে যুদ্ধাবস্থা চলছে বলে ভারতীয় ও চীনা মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে। ইতোপূর্বে ভারতের অরুণাচল সীমান্তের বেশ কয়েকটি এলাকাতেও ভারতীয় ও চীনা বাহিনী বিবাদে জড়িয়েছে। সে সব এলাকায় এখনও উত্তেজনা রয়েছে। নতুন করে সিকিমের ডোংলং সীমান্তে এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক যুগশঙ্খের এক খবরে বলা হয়েছে, সীমান্তে বিরোধের পেছনে চীনের লক্ষ্য বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তার। তার জন্যই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় ক্রমাগত অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধারণা, একুশ শতকে অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রায় সবটাই হচ্ছে সামুদ্রিক আধিপত্যের ওপর ভিত্তি করে। ইতোমধ্যেই চীন আরব সাগরে আধিপত্য কায়েমের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর সোজা চলে এসেছে করাচির গরদবন্দর পর্যন্ত। গরদবন্দরে আধিপত্যের অর্থ গোটা আরব সাগরেই আধিপত্য কায়েম। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় চীন একটি বন্দর নির্মাণ করে দিচ্ছে। ওই বন্দর দিয়ে ভারত মহাসাগরে আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে চীন। ভারত বহু চেষ্টা করেও শ্রীলঙ্কায় বন্দর গড়ার অনুমতি পায়নি। কেবলমাত্র বঙ্গোপসাগরেই ভারতীয় আধিপত্য রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন চীন থেকে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছতে গেলে স্থলপথ দিয়েই যেতে হবে। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মোট ৬টি বন্দর- কলকাতা, হলদিয়া, মংলা, চালনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। এর মধ্যে ২টি ভারতে এবং বাকি ৪টি বাংলাদেশে। চীনকে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে পৌঁছাতে গেলে পাঁচটি এলাকা পেরিয়ে যেতে হবে। এই পাঁচটি এলাকাতেই চীন নিজস্ব আধিপত্য কায়েম করতে চায়। এগুলো হল, নেপাল, সিকিম, ভুটান, লাদাখ এবং অরুণাচল। এই পাঁচটি এলাকা এখন হয় ভারতের মানচিত্রের মধ্যে রয়েছে অথবা ভারতীয় প্রভাবে রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা, এই পাঁচটি এলাকাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা কিংবা ভারতীয় প্রভাবমুক্ত করা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ভারত-চীন সীমান্তের নাথুলা থেকে কলকাতার দূরত্ব ৭২৭ কি.মি., ঢাকার দূরত্ব ৬৪০ কি.মি. এবং চট্টগ্রামের দূরত্ব ৯০০ কি.মি.। চীনের ইয়াডং রেলপথ তিব্বতের মধ্যে দিয়ে নেপালের কাঠমা-ুতে চলে আসার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। চীন চায় ভুটানের মধ্যে দিয়েও রেলপথ যুক্ত করুক তিব্বতকে। ভুটানে দূতাবাস খোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও ভারতে বাধায় সফল হতে পারেনি চীন। তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার সঙ্গে যুক্ত সিকিম-ভুটান-তিব্বত সীমান্ত এলাকার ডোংলং ঠিক এই কারণেই চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নেপালে চীনের উপস্থিতি বেশ জোরালো। এই নেপাল থেকেই দাবি তোলা হচ্ছে ‘গ্রেটার নেপাল’ এর। ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য, গ্রেটার নেপাল আন্দোলনের পিছনে রয়েছে চীনা গোয়েন্দা সংস্থা মিনিষ্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটিজ বা এমএসএস। গ্রেটার নেপালের যে প্রস্তাবিত মানচিত্র পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছানোর পরিকল্পনার মিল প্রচুর। গ্রেটার নেপালের প্রস্তাবিত মানচিত্রে রয়েছে, হিমাচলের সিমলা, উত্তরাখ-ের শ্রীনগর, দেরাদুন, গাড়োয়াল, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং পাহাড় থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ি এবং ডুয়ার্স, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং বাংলাদেশের দিনাজপুর ও রংপুর জেলা। এই আন্দোলনের পাশে থাকার সঙ্গে সঙ্গেই দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনেও চীনের গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন রয়েছে একই উদ্দেশ্যে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ