সিকিম সীমান্তে সুবিধাজনক অবস্থায় ভারত
হিরণ¥য় ভট্টাচার্য, সিকিমের নাথাংভ্যালি থেকে ফিরে : আর্থিক ও সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ভারত থেকে এগিয়ে চীন। তবুও ডোকলা বা ডোকলাংয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর রক্তচক্ষু দেখে বারবার যুদ্ধের হুমকি দেওয়া চীন এবার কাঁপছে। সিকিম সীমান্তের নাথাংভ্যালিতে পা রেখে এমনটাই আভাস পাওয়া গেল। জুন মাসের প্রথম দিকেই গোটা ঘটনার সূত্রপাত। চীন বিবাদিত ডোকলাং এলাকায় ভুটান সীমান্তের ভেতর প্রবেশ করে সড়ক তৈরির কাজ শুরু করে। ভারতীয় সেনা সেই সড়ক তৈরির কাজ বন্ধ করিয়ে দেয়। এতে চীনা সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতীয় সেনার দুটি পুরনো বাংকার ভেঙে দেয়। আর এ নিয়েই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকে। চীনা সেনাবাহিনী প্রায় তিন হাজার সেনা মোতায়েন করে বিবাদিত এলাকার চীন সীমান্তে। জবাবে পুরো যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে ময়দানে নামে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের পক্ষেও তিন হাজার সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে ভারত-ভুটান-চীন সীমান্তবর্তী এলাকার ডোকলাং এলাকার দুদিক দুদেশের সেনার দখলে। গ্যাংটক থেকে কিছুটা এগোলেই এক থমথমে পরিস্থিতি। যানবাহনের চলাচল খুবই কম। কারণ যেকোনো সময় যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তাই সীমান্তের মানুষরাও ভয়ে ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে শনিবার ডোকলাং এলাকায় পৌঁছার অনেক আগেই নাথাংভ্যালিতেই সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই যেখানে যুদ্ধের দামামা বেজেছে, ঠিক সেই স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হলো না। তবে যা যা চোখে পড়ল তাতে একটা বিষয় সুনিশ্চিত যে এই মুহূর্তে সিকিম সীমান্তে ভারতীয় সেনা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এই মুহূর্তে সিকিম সীমান্তে যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে চীনকে বড় মূল্য দিতেই হবে। একটি দেশ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যুদ্ধে টিকে থাকতে হলে চাই প্রয়োজনীয় রসদের যোগান। চীন যে জায়গায় সেনা মোতায়েন করেছে, সেই জায়গাটি খুবই দুর্গম। ওখানে চীনা সেনাদের কাছে রসদ পৌঁছানোর কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।
অন্যদিকে, ভারতীয় সেনার এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই বললেই চলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এক ভারতীয় সেনা মোকাবিলার জন্য চীনের কম করে হলেও দশজন সেনার প্রয়োজন। ফলে ডোকলাংয়ে লেজে-গোবরে অবস্থা। না সেনাবাহিনী সরিয়ে নিতে পারছে বেইজিং, না আক্রমণে যেতে পারছে। সব মিলিয়ে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বেকায়দায়। তাই কূটনৈতিকভাবে চীন ভারতকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে। সমান্তরালভাবে মিডিয়াকে ব্যবহার করছে বেইজিং। শনিবার চীন একটি মানচিত্র প্রকাশ করে বলেছে, ডোকলাংয়ের চীনা সীমান্তের ভেতর ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে। ওই মানচিত্রে বিবাদিত চুম্বাভ্যালির ডোকলা বা ডোকলাংয়ের ভুটানের অংশ চীন নিজের এলাকা বলেই দাবি করেছে। এদিকে, অন্তত গ্রাউন্ড রিপোর্ট চীনের এই দাবির বিপক্ষে কথা বলছে। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারত ও ভুটান সীমান্তের ভেতরেই মোতায়েন রয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেইজিং প্রথমে ভেবেছিল, যুদ্ধের হুমকি দিলেই ভারত ভয় পাবে। ভারতীয় সেনা সরে আসবে। আর তারা রাস্তা তৈরি করবে। কিন্তু চীনের হুমকির পর পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সীমান্তে ভারতীয় সেনা সীমান্তে হাজির হওয়ার ফলে বেইজিংয়ের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। যা কখনো কল্পনা করেনি বেইজিং। শনিবার ভারতীয় সেনার নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে বলেন, ডোকলাংয়ে ভুটানের ভেতর প্রবেশ করে চীনকে ভারতীয় সেনা রাস্তা তৈরি করতে দেবে না। চীনকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার পেছনে আরও কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম হলোÑ সদ্য সমাপ্ত মোদি-ট্রাম্প বৈঠক। এছাড়াও আরও কিছু বিষয় নিয়ে এখন ভাবতে হচ্ছে চীনকে। যদি তারা ভারতের উপর হামলা চালায় তাহলে অন্য সীমান্তে জাপান ও ভিয়েতনাম আক্রমণ চালাতে পারে। দক্ষিণ চীন সাগরে ইতোমধ্যে জাপান-ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা বাড়িয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সিকিমে যুদ্ধের দামামা বাজলেও চীনের পিছু হটার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী