সিটিসেলের সিইও মেহবুব চৌধুরী গ্রেফতার
সুজন কৈরী : এবি ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সিটিসেলের সিইও মেহবুব চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল শনিবার বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে দুদকের উপ-পরিচালক আব্দুস সালামের নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে মেহবুব চৌধুরী শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরেন। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেহবুব চৌধুরীকে বনানী থানায় রাখা হয়েছে। আজ রোববার তাকে আদালতে নেওয়া হবে। সিটিসেলের নামে ওই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ৩৬৩ টাকা ১৩ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ জুন প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও প্রতিষ্ঠানটির সিইও মেহবুব চৌধুরী এবং মোরশেদ খানের স্ত্রী নাসরিন খানসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক শেখ আবদুস ছালাম। মামলার এজাহারে বলা হয়, পিবিটিএলের চেয়ারম্যান মোরশেদ খান ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে অসৎ উদ্দেশ্যে এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখাকে গ্যারান্টর করে ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। গত ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে এই অর্থ নেওয়া হয়। ঠিক সময়ে পরিশোধ না করায় তা সুদ-আসলে ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়, যা এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ওই অর্থ আত্মসাতের সময় মোরশেদ খান এবি ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জামিনদার হওয়ার কাজ করেছিলেন। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় প্যাসিফিক টেলিকম ও এবি ব্যাংকের ওই কর্মকর্তাদেরও তাই আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্তরা ব্যাংক গ্যারান্টির আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই না করেই এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখার দেওয়া প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। পরে ৩ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহায়তায় ৪টি বোর্ড সভার মাধ্যমে অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন ওই ব্যাংক গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঋণ নেওয়ার তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে আলাদাভাবে ৮ ব্যাংকের টাকা পরিশোধের শর্ত ছিল। টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে ৮ ব্যাংক থেকে এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখায় চিঠি পাঠানো হয়। ঋণের গ্যারান্টর হিসেবে ব্যাংকিং বিধি-বিধান মেনে এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখা বাধ্য হয়ে মোরশেদ খানের দায় হিসেবে ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওই পরিমাণ টাকা পরিশোধ করে। প্রতারণা করে এবি ব্যাংককে তা পরিশোধে বাধ্য করে অভিযুক্তরা ওই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। দ-বিধির ৪০৯/১০৯/৪২০ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুদক জানায়, ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাৎ করা ঋণের মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের ৫০ কোটি, কমার্স ব্যাংকের ১০ কোটি, সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির ২৩ কোটি, পূবালী ব্যাংকের ৩০ কোটি, ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৪৭ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ৫০ কোটি, সিটি ব্যাংকের ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ও ঢাকা ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকা। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ